ডানা না থাকা সত্ত্বেও উড়তে পারে এমন ৫ টি আজব প্রাণীঃ
পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাণী আছে যাদের ডানা না থাকা সত্ত্বেও আকাশে উড়তে পারে। এসকল প্রাণী গুলো সাধারণত অন্যান্য প্রাণী থেকে বিশেষ গুণ ক্ষমতার অধিকারী হয়। আজকে এমন পাঁচটি প্রাণী সম্পর্কে আলোচনা করব।
১. উড়ুকুক সাপঃ
এই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে উড়ুকুক সাপ। সাপ হচ্ছে এক প্রকার সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী যারা বুকে ভর করেই চলা ফেরা করে থাকে। সেই সাপকে যদি দেখা যায় বাতাসে সাহায্যে উড়ে বেড়াতে তখন ব্যাপারটা একটু আশ্চর্যকর! পৃথিবীতে এমন প্রজাতির সাপও আছে যারা বাতাসে ভেসে পথ পাড়ি দিতে পারে। আর এমন কিন্তু সাপ আমাদের দেশেও দেখতে পাওয়া যায়। আর আমরা এই সাপদের বলা থাকি উড়ুক্কু সাপ। এই উড়ুক্কু সাপ বিশেষ এক কৌশল অবলম্বন করে বাতাসে ভেসে থাকার জন্য সক্ষমতা অর্জন করে। তাদের শারীরিক গঠনও অন্যান্যদের চেয়ে একটু বিশেষ ধরনের। এদের শরীর অন্যান্য সাপের তুলনায় অনেক হালকা। আর যার ফলে তারা তাদের নিজের শরীরটাকে প্রথমে একেবারে কুঁচকে ফেলে। তারপর লেজের শেষ অংশ দিয়ে বিশেষভাবে মাটিতে জোরে ধাক্কা দিয়ে মাথাটাকে শূণ্যের দিকে দিয়ে আকাশে উড়ে। উড়ার সময় বাতাসে এরা তাদের শরীরটাকে কিছুটা প্রসারিত করে যার ফলে এরা উড়ে যেতে পারে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত জায়গাতে।
২. গিরগিটিঃ
তালিকায় ২য় স্থানে রয়েছে গিরগিটি। গিরগিটি আছে নানান প্রজাতির। এদের মধ্যে থেকে কয়েকটি প্রজাতি উড়ে বেড়াতে পারে। যে সব গিরগিটি ভেসে ভেসে উড়ে বেড়াতে পারে তাদের দৈহিক ভাবে কিছু বিশেষ গুণ ক্ষমতা রয়েছে। এসব গিরগিটিদের শরীরের দুই পাশে রয়েছে একটু বাড়তি চামড়া। এই চামড়া অনেকটা পাখির ডানার মতো কাজ করে। এজন্য কোনো গাছের ওপরের দিকের ডাল থেকে এই গিরগিটিরা প্রথমে লাফ দেয় শূণ্যের দিকে। তারপর তাদের শরীরের দুপাশে ভাঁজ করে রাখা চামড়া মেলে ধরে দুপাশে, ঠিক যেন পাখির ডানার মতো। তারপর বাতাসের গতি এবং শরীরের ভরকে কাজে লাগিয়ে তারা উড়ে বেড়াতে সক্ষম হয়। এই চামড়া আবার উড়ুক্কু গিরগিটিরা ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখতে পারে তাদের শরীরের দুইপাশে। যখন তাদের বাতাসে ভেসে বেড়ানোর প্রয়োজন হয় তখনই তারা অংশটুকু বের করে এরা আকাশে ভাসে।
৩.লেমুরঃ
এই তালিকায় ৩য় স্থানে রয়েছে লেমুর। লেমুর হল মাদাগাস্কারের প্রাইমেট গোত্রভুক্ত কিছু প্রাণীর সমষ্টিগত নাম। ল্যাটিন শব্দ lemurs থেকে লেমুর শব্দটির উৎপত্তি যার অর্থ ভূতের মত। রাতের আধারে লেমুরের মুখে আলো ফেললে অনেকটা ভূতের মত দেখায় তাই এর নামকরণ এভাবে করা হয়েছে। প্রাকৃতিক ভাবে লেমুর সাধারনত আফ্রিকার মাদাগাস্কারেই দেখতে পাওয়া যায়।লেমুররা সামাজিক প্রাণী এবং এরা দলগত ভাবে বসবাস করে। একটি দলে সর্বোচ্চ ১৫ টি লেমুর থাকতে পারে।দলবদ্ধ ভাবে থাকার পরেও এদের সামাজিক অবস্থানটা অনেকটা স্বতন্ত্র। এরা জোড়ায় বা একাধিক পুরুষ বিশিষ্ট পরিবারেও থাকতে পারে। নিশাচর লেমুররা সচরাচর স্বতন্ত্র ভাবে ঘোরাফেরা করলেও সচরাচর দিনের বেলা এরা দলের সাথে যোগ দেয়।তবে এই প্রাণীর কোন রকম ডানা নেই তা সত্ত্বেও পা দিয়ে মাটিতে জোরে ধাক্কা দিয়ে বেশ দূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে।
৪.পেঙ্গুইনঃ
এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে পেঙ্গুইন। পেঙ্গুইনের বাস দক্ষিণ মেরুবলয়ের আশেপাশে। এরা সবাই দিবাচর আর সমুদ্রবাসী। দুর্দান্ত সাঁতারু এবং তাড়া করে মাছ ধরে। হাঁটতে অপটু, তবে উবুড় হয়ে শুয়ে দুই হাতডানা নেড়েচেড়ে বরফের উপর দিয়ে এগিয়ে যায়। বুক পেট ধবধবে সাদা, বাকি শরীর কালো বা নীলচে। বরফরাজ্যের বাসিন্দা পেঙ্গুইন সাঁতারে দারুণ পটু। আর এই বিশেষ দক্ষতার কারণেই হয়তো আকাশে ভেসে বেড়ানোর ক্ষমতা তাদের একটু কম। গবেষকেরা এমনটিই বিশ্বাস করেন। পেঙ্গুইনের ডানা খুবই ছোট এবং সাঁতারের জন্য যতটা উপযোগী, উড়ার জন্য ঠিক ততটাই উপযোগী নয়। কিন্তু সম্প্রতিকালে কিছু গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন পেঙ্গুইন আকাশে উড়তে পারে। নিচের দেওয়া ভিডিও টির মাধ্যমে বিস্তারিত দেখে নিবে।
৫. উড়ন্ত কাঠবিড়ালীঃ
তালিকায় ৫ম স্থানে রয়েছে উড়ন্ত কাঠবিড়ালী। কাঠবিড়ালীরা সাধারণত গাছের এডাল ওডাল সারাদিন ঘুরে উড়ে বেড়ায়। তবে কিছুকিছু কাঠবিড়ালী আছে যারা এগাছ থেকে ওগাছে যাবার জন্য ব্যবহার করে তাদের উড়তে পারার সক্ষমতা। আর তাদের উড়তে সাহায্য করে তাদের শরীরের ও লেজের গঠন। এদের লেজ এদের শরীরের থেকেও বড় ও লোমশ হয় । উড়ার জন্য কাঠবিড়ালীরা এক গাছের উঁচু ডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং তাদের শরীরের দুইপাশে থাকা চামড়া সম্প্রসারিত করে যার ফলে শূন্যে ভাসতে থাকে। উড়ার সময় কাঠবিড়ালীরা তাদের মোটা লোমশ লেজটাকে কাজে লাগায় যার মাধ্যমে তারা সঠিক গন্তব্যে পৌছায়। লেজের মাধ্যমে দিক নির্ণয় করে কিছুদূর গিয়ে কাঁঠবেড়ালী কাছের যে কোন স্থানে নেমে আসে। আর এ সময় বিড়ালের মতো কাঁঠবিড়ালীর পায়ের নিচে থাকা নরম মাংশপিন্ড তাকে সাহায্য করে মাটিতে নেমে আসার জন্য।
আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।
0 coment rios: