শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী।

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনীঃ  

পৃথিবী সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকে অনেক পন্ডিত, গণিতজ্ঞ, ভূগোলবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী,দার্শনিকের জন্ম হয়েছে। তবে আজকে পৃথিবীর বিখ্যাত ৭ জন গনিতবিদের জীবনী সংক্ষিপ্ত  আকারে মূল বিষয়বস্তু গুলো তুলে ধরব। 

১.আল খারিজমিঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

আল খারিজমিকে বীজগণিতের জনক বলা হয়। ৭৮০ থেকে৮৫০ মধ্যযুগীয় মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।  তিনি ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, ভূগোলবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তার পুরো নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল খারিজমি। তার জন্ম সোভিয়েত রাশিয়ার আরব সাগরে পতিত আমু দরিয়া নদীর একটি দ্বীপের নিকটে অবস্থিত খোয়ারিজম নামক শহরে। এই শহরটি প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল যার তত্কালীন নাম ছিল উরগেঞ্চ। তার জন্ম তারিখ বা শৈশব ও কৈশোর সম্বন্ধে কিছু জানা যায়নি। তবে আনুমানিক ৭৮০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।আল খারিজমি খলিফা আল মামুনের বায়তুল হিকমাহ সংলগ্ন গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারিকের চাকুরি করতেন। খলিফা মামুনের মৃত্যুর পরও তিনি জীবিত ছিলেন এবং পরবর্তী খলিফা আল ওয়াতহিকের শাসনকালের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি পাটিগণিত, বীজগণিত, ভূগোল এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানে প্রভূত অবদান রাখেন। তবে মূলত বীজগণিতের জন্যই তিনি সবচেয়ে বেশী আলোচিত হন।এজন্যই তাকে বীজগণিতের জনক বলা হয়। খলিফা আল মামুনের মৃত্যুর ১৪ বছর পর (আনুমানিক ৮৫০ খ্রীষ্টাব্দে) আল খারিজমির মৃত্যু হয়।

২.আর্যভট্টঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

আর্যভট্টকে পাটিগনিতের জনক বলা হয়। প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত গণিতবিদদের মধ্যে একজন। আর্যভট্টের কাজ থেকে তাঁর জন্মসাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁর জন্মস্থান নিয়ে সুবিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি বর্তমান কেরলের লোক। আর্যভট্টের অন্যতম ভাষ্যকার ভাস্কর(প্রথম) এর ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর জন্ম হয়েছিল অশ্মকা নামের একটি জায়গায়। প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু রীতিতে এই জায়গাটিকে নর্মদা এবং গোদাবরী নদীর মধ্যবর্তী স্থানে দক্ষিণ গুজরাট এবং উত্তর মহারাষ্ট্রের আশেপাশের একটি জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিছু তথ্যমতে জানা যায় যে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য কুসুমপুরায় গিয়েছিলেন। তিনি কুসুমপুরাই বসবাস করতেন, তার ভাষ্যকার ভাস্কর(প্রথম) যে স্থানকে পাটালিপুত্র বলে অভিহিত করেছেন সেটি বর্তমান ভারতে পাটনা নামে পরিচিত। তিনি কুসুমপুরের আর্যভ নামে খ্যাত ছিলেন। ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নাম তার নামে “আর্যভট্ট” রাখা হয়েছে।

৩.ইউক্লিডঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ ইউক্লিড। তিনি জ্যামিতি শাস্ত্রের জনক হিসেবে পরিচিত। তাঁর জন্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৫ সালের কাছাকাছি সময়ে তাঁর জন্ম হয়। বেঁচে ছিলেন প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সাল পর্যন্ত। তিনি প্লেটোর ছাত্র ছিলেন। প্লেটোর স্কুলে পড়াশোনা করেছেন বলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা। গণিতের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবদান রয়েছে। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে বিখ্যাত বই এলিমেন্টস। বইটি প্রকাশিত হয় মোট ১৩ খণ্ডে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে রচিত বইটিতে রয়েছে সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ, সূত্র ও অনুসিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন প্রস্তাবনার গাণিতিক প্রমাণ। ১৩টি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি এবং প্রাথমিক সংখ্যাতত্ত্ব। ছাপাখানা আবিষ্কারের (১৪৮২) পর সর্বপ্রথম মূদ্রিত বইগুলোর মধ্যে এলিমেন্টস অন্যতম। এক হাজারেরও বেশিসংখ্যকবার মুদ্রিত হওয়ার জন্য মুদ্রণ সংখ্যার দিক থেকে বাইবেলের পরেই এর অবস্থান। বইটি প্রভাবিত করেছে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি, নিকোলাস কোপারনিকাস, জোহানেস কেপলার ও বিশেষভাবে আইজাক নিউটনকে। 

৪.সামোসের পিথাগোরাসঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

পিথাগোরাসকে সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয়। সামোসের পিথাগোরাস খ্রিস্টপূর্ব ৫৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন একজন আয়োনীয় গ্রিক দার্শনিক, গণিতবিদ এবং পিথাগোরাসবাদী ভ্রাতৃত্বের জনক যার প্রকৃতি ধর্মীয় হলেও তা এমন সব নীতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল যা পরবর্তীতে প্লেটো এবং এরিস্টটলের মত দার্শনিকদের প্রভাবিত করেছে। তিনি বর্তমান তুরস্কের কাছাকাছি অবস্থিত সামোস দ্বীপে জন্মেছিলেন। বলা হয়ে থাকে তিনিই প্রথম যে নিজেকে দার্শনিক বা প্রজ্ঞার প্রেমিক হিসেবে দাবী করেছিলেন। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পিথাগোরাসের উপপাদ্য। আর এর কারনেই তিনি বিশ্বে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজও সকলের মাঝে বেচেঁ আছেন । তিনি ৪৯৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (৭৫ বছরের কম বয়সে) দক্ষিণ ইতালির মেতাপোন্তুম এ মৃত্যুবরণ করেন ।

৫.আইজাক নিউটনঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

আইজাক নিউটনকে ক্যালকুলাসের জনক বলা হয়।বিজ্ঞানী নিউটন জন্মগ্রহণ করেন ১৬৪২ সালে ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশায়ারের গ্রানথামের নিকটবর্তী উল্স্থর্প নামক গ্রামে। তার পিতার নামও ছিল আইজাক নিউটন। নিউটনের জন্মের কয়েক মাস আগেই পিতার মৃত্যু হয়। তার মা হ্যানা নিউটন, স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পুত্রের নাম রেখেছিলেন আইজাক নিউটন।ছাত্রাবস্থা থেকেই নিউটন বিজ্ঞান ও অঙ্কে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ১৬৬৫ সালে নিউটন স্নাতক ডিগ্রি লাভ করলেন। কলেজে ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় তিনি কিছু জটিল তথ্যের আবিষ্কার করেন - বাইনমিয়াল থিওরেম, ফ্লাক্সসনস যা বর্তমানে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস নামে পরিচিত। এ ছাড়াও তিনি আবিষ্কার করেন কঠিন পদার্থের ঘনত্ব। ১৬৬৬ সালে ফ্লাক্সসনস পদ্ধতি উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেছেন। অবাক করা বিষয়, এ সময় নিউটনের বয়স তখন মাত্র ২৪ বছর।

৬.জন নেপিয়ারঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

জন নেপিয়ারকে লগারিদমের জনক বলা হয়। স্কটল্যান্ডের নেপিয়ার বংশের জমিদারি, বংশমর্যাদা, সামাজিক প্রতিপত্তির শত বছরের শাসনের ইতিহাসের মাঝে তাঁর জন্ম। যে কেউ এমন ছেলেকে ভবিষ্যতের জমিদার বলবেই। কিন্তু ছেলেটি পৃথিবীর ইতিহাসে জমিদার কিংবা শাসক হিসেবে সম্মাননা পাননি, একজন গণিতবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছেন জ্ঞান-বিজ্ঞানের গণিতের ভুবনে। ষোলো শতকের বিখ্যাত গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিজ্ঞানী জন নেপিয়ার ১৫৫০ সালে এডিনবরাতে জন্মগ্রহণ করেন। শৌখিন গণিতবিদ জন নেপিয়ার লগারিদম ছাড়াও সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন।বর্তমানে বীজগণিতনির্ভর লগারিদমের প্রচলন থাকলেও জন নেপিয়ারের সময় বীজগণিত উন্নত ছিল না। তিনি জ্যামিতিক প্রকাশের মাধ্যমে লগারিদমের উদ্ভাবন করেন। ইংরেজ গণিতবিদ হেনরি ব্রিগসের সহায়তায় তিনি গাণিতিক ধ্রুবক e-এর মান সংশোধন করেন। গণিতের ভুবনে জন নেপিয়ারের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তড়িৎ প্রকৌশলবিদ্যায় শব্দ মাত্রার একক ডেসিবলের পরিবর্তে ‘নেপার’ রাখা হয়েছে। চাঁদের একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের নামকরণও করা হয়েছে নেপার নামে। ১৬১৭ সালে গণিতবিদ জন নেপিয়ার মৃত্যুবরণ করেন।

৭.ফিলিপ ক্যান্টরঃ

বিখ্যাত ৭ জন গণিতবিদের জীবনী। Famous 7 Biography of Mathematicians.

ফিলিপ ক্যান্টরকে সেটতত্ত্বের জনক বলা হয়। ফিলিপ ক্যান্টর ১৮৪৫ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটারসবারগ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অসীম সেটের ধারণা প্রাদান করে গণিত শাস্ত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং তার সেটের ধারণা সেট তত্ত্ব নামে পরিচিত। সেট তত্ত্বটি গাণিতিক লজিকের একটি শাখা যা সেট করে আলোচনা করে। বাস্তব বা চিন্তা জগতের সু-সাংজ্ঞাইয়িত বস্তুর সমাবেশ বা সংগ্রহকে সেট বলে। যেমন বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে তিনটি পাঠ্যাবইয়ের সেট, প্রথম দশটি বিজোড় সংখ্যার সেট, পূণসংখ্যার সেট, বাস্তব সংখ্যার সেট ইত্যাদি। প্রায় সব গাণিতিক বস্তুর সংজ্ঞাতে সেট তত্ত্বের ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে। এই মহান বিজ্ঞানী ১৯১৮ সালে ৬ জানুয়ারী জার্মানির হালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিও টি দেখুনঃ

শেয়ার করুন

Author:

আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।

1 টি মন্তব্য: