আমাদের দেশে শিশুর নিউমোনিয়া রোগ কথাটি শুনলেই প্রত্যেক মায়ের বুক কাঁপনই দিয়ে উঠে। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুবরণ করেন।কিন্তু ভয়ের কোন কারণ নেই যদি আপনারা সন্তান জন্মলাভের পর থেকেই সচেতন হন সেক্ষেত্রে এই রোগ আক্রান্ত করতে পারবে না।আজ আমরা জানব, নিউমোনিয়া রোগ কি? নিউমোনিয়া রোগে কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় এবং কেন? এই রোগ থেকে বাঁচার উপায় ও তার প্রতিকার।
নিউমোনিয়া কীঃ
ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ নিউমোনিয়া। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়।তবে ব্যাকটেরিয়া জনিত নিউমোনিয়া বেশি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুটির শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিকের তুলনায় দিগুণ হয়ে যায় এবং বুক থেকে ঘড়ঘড় শব্দ হতে থাকে। নিউমোনিয়া রোগ নবজাতকের মধ্যে প্রসবের সময় মায়ের কাছ থেকে সংক্রমণ হলে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হতে পারে।
কারা সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ঃ
- যে সকল শিশুর বয়স দুই বছরের নিচে থাকে তারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
- যে সকল শিশু জন্মের পরে পুষ্টির অভাব হয়।
- যে সকল শিশু মায়ের দুধ কম পায়।
- যাদের হাম, টিবি, ডিপথেরিয়া, বিশেষ করে নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয় নাই তারা আক্রান্ত হয়।
- যে সকল বাড়িতে সূর্যের আলো থাকে না বিশেষ করে বাচ্চাদের সূর্যের আলো শরীরে না মাখালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
- বাচ্ছাদের সামনে ধূমপান করলে।
নিউমোনিয়ার রোগের লক্ষণঃ
নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো হলো-
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত নেওয়া, শ্বাস গ্রহণের সময় বাঁশির মতো শব্দ হওয়া।
- শিশুর চঞ্চলতা কমে যাওয়া বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া।
- খেতে না চাওয়া বা খেতে না পারা।
- শ্বাসকষ্টের সময় কাশির পরিমাণ বাড়ে এবং অতিমাত্রায় জ্বর হওয়া।
- বমি, পেট ব্যথা করা।
- ঠোট ও আঙুলের নখ ধূসর অথবা নীলাভ রং ধারণ করা
নিউমোনিয়া চিকিৎসা বা প্রতিরোধের উপায়ঃ
- প্রথম কথা হলো, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
- নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু খাবার ও পানি যেন পরিপূর্ণভাবে পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- যারা বুকের দুধ খায়, তাদের বুকের দুধ কোনোমতেই বন্ধ করা যাবে না।
- নিউমোনিয়ার কিছু ভ্যাকসিন বের হয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলো যদি সময়মতো নেওয়া যায়, তাহলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
- শিশুকে সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাকে রাখতে হবে এবং কোন রকম আদ্র বা ভেজা কাপড়ে রাখা যাবে না।
- শিশুকে উষ্ণ পানি দ্বারা শরীর মুছে দিতে হবে। কোন রকম ঠাণ্ডা পানি দ্বারা গোসল করানো যাবে না ।
- সকালে সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ বাচ্ছাকে রাখতে হবে।
- যতবার পারেন আপনার বুকের শাল দুধ খাওয়ান।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো আপনারা যদি মেনে চলেন তাহলে আপনার বাচ্ছাকে নিউমোনিয়া স্পর্শ করতে পারবে না। তাই আপনারা বাচ্ছা জন্মের সাথে সাথে উক্ত বিষয়ে সচেতন থাকবেন।
লেখকঃ মোঃ সাজেদুর রহমান
0 coment rios: