বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়।

হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য আপনার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়।

হাতের লেখা সুন্দর করতে প্রয়োজনীয় উপকরণসমুহঃ
১। খাতা তিনটি। যথাঃ
i) দাগটানা বাংলা খাতা ১ টি 
ii)দাগটানা ইংরেজি খাতা ১টি
iii)সাদা রাফ খাতা ১ টি
২। কালিবিহীন কলম
৩।রুলার অথবা স্কেল ১ টি
হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য ১২ টি লক্ষনীয় বিষয়ঃ 
  1. সকল বর্ণ ও letter বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্য বই অনুযায়ী লেখা।
  2. সকল কার ও ফলা (া,ি,ী,............)বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্য বই অনুযায়ী লেখা।
  3. বাংলা বর্ণের সঠিক মাত্রা ও ইংরেজি letter সঠিক  Extended অনুযায়ী লেখা।
  4. শব্দ গঠনে বর্ণসমূহের সম-আকৃতির লেখা।
  5. শব্দ গঠনে বর্ণসমূহের সমদূরত্ব বজায় রাখা।
  6. সারি থেকে সারির সমদূরত্ব বজায় রাখা।
  7. বাক্য গঠনে শব্দ সমূহের সমদূরত্ব বজায় রাখা।
  8. স্তবকের শেষ লাইন আংশিক এবং স্তবক থেকে স্তবক সমদূরত্ব বজায় রাখা।
  9. প্রতিটি সারি সোজা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  10. প্রতিটি সারি উভয় পাশে লম্বভাবে সোজা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
  11. ইংরেজি বাক্য লেখার ক্ষেত্রে Capital Letter ও  Small letter এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  12. যুক্ত বর্ণ গুলো পাঠ্য বইয়ে যেভাবে লেখা থাকে ঐভাবে লিখলে হাতের লেখা অনেক সুন্দর দেখায়।
হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য আপনার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করণীয়।
beautiful handwriting image-http://www.topbanglapages.com/


হাতের লেখা সুন্দর করার আরও কিছু কৌশলঃ

সঠিক প্রবাহঃ
বর্ণ লেখার সময়ে কোন স্থান থেকে শুরু করে কোন স্থানে শেষ করতে হবে তার গতি প্রবাহ নির্দেশনা দেওয়া । শিক্ষার্থীর এটি বোঝাবার জন্য শিক্ষককে নম্বর অনুযায়ী( ১,২,৩....... ) অথবা তীর চিহ্ন এর দিক নির্দেশনা মেনে বর্ণগুলো ধীরে ধীরে লিখতে হয়।

সঠিক আকৃতিঃ
প্রতিটি বর্ণের আকৃতি যাতে সমান হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। তাহলে হাতের লেখা অনেক সুন্দর ও মাধুর্যপূর্ণ  দেখায়।

সমান্তরঃ
বর্ণগুলোর মধ্যকার দূরত্ব সমান রাখতে হবে। এটি বাক্য লেখার ক্ষেত্রে প্রতিটি শব্দের মধ্যকার দূরত্বের ভারসাম্য বজায় রাখে। বর্ণগুলোর আনুভূমিক ও উলম্বিক বিস্তৃতি  হওয়া উচিত।

সমপদঃ
প্রতিটি বর্ণের নিচের অংশে সমান হওয়া দরকার বা মনে মনে একটি রেখা কল্পনা করলে তা যেন সরল রেখায় রুপ নেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সমশিরঃ
প্রতিটি বর্ণের উপরের অংশ সমান হওয়া দরকার বা মনে মনে একটি রেখা কল্পনা করলে তা যেন সরল রেখায় রুপ নেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সঠিকমাত্রাঃ
কোন কোন বর্ণ পূর্ণ মাত্রা, অর্ধমাত্রা , ও মাত্রাহীন হয় সেই বর্ণগুলো লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

হাতের লেখা সুন্দরের ক্লাস পদ্ধতিঃ
প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে প্রতিদিন হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য আলাদা ২০ মিনিট ক্লাস অনুষ্ঠিত করতে হবে। এই ক্লাস পরিচালনা করার জন্য তিনটি খাতা থাকবে। যথাঃ বাংলা, ইংরেজি ও রাফখাতা। হাতের লেখা সুন্দরের ক্লাস পরিচালনায় দায়িত্বরত শিক্ষক প্রথমে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ খাতায় পর্যায়ক্রমে বাংলা বর্ণ ও ইংরেজি বর্ণ বোর্ড বই অনুযায়ী লিখে দিবেন যা ছাত্রছাত্রীরা বাংলা বর্ণ বাংলা খাতায় ও ইংরেজি বর্ণ ইংরেজি খাতায় সথিকভাবে  লিখবে। তারপর বাংলা ও ইংরেজি উভয় লেখাটি আবার রাফ খাতায় কালিবিহীন কলমের সাহায্যে দাগ টেনে সোজা করে লিখবে। এই ক্ষেত্রে প্রতিটি দাগের দূরত্ব এক ইঞ্চির চারভাগের দেড় ভাগ হবে। অন্য কথায় অর্থাৎ এক পৃষ্ঠায় ১৭ লাইন।

 তারপর শিক্ষক ছাত্রছাত্রীর নিকট থেকে খাতা সংগ্রহ করে অফিস কক্ষে সংরক্ষন করবেন এবং পরবর্তীতে খাতাগুলি মূল্যায়ন করে অসুন্দর লেখায় গোল দাগ প্রদান করে শিক্ষক নিজ হাতে সুন্দর করে লিখে দেবে। এইভাবে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর বাংলা বর্ণ ও ইংরেজি বর্ণ সঠিক হলে পরবর্তী সময়ে স্ব - স্ব শ্রেণির বাংলা মাধ্যমের লেখা বই হতে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরণ এবং ইংরেজি মাধ্যমের বই হতে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ একটি বাক্য শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ খাতায় লিখে দিবেন। এইভাবে প্রতিদিন হাতের লেখা চলতে থাকবে।

হাতের লেখা সুন্দর প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা, মুল্লায়ন ও পুরষ্কার প্রদান পদ্ধতিঃ
প্রত্যেক মাসের শেষ কার্যদিবসে প্রত্যেক শ্রেণিতে হাতের লেখা সুন্দরের প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষা শ্রেণিভিত্তিক একই প্রশ্নে অনুষ্ঠিত করতে হবে।

প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর খাতা থেকে নামের অংশ কেটে কোড নম্বরের সাহায্যে খাতা মূল্যায়ন করতে হবে।
শ্রেণিভিত্তিক হাতের লেখা সুন্দরের শিক্ষক ব্যতিত অন্য শিক্ষক দ্বারা প্রতিটা শ্রেণির অপেক্ষাকৃত সুন্দর লেখার খাতা বাছায় করে প্রতিটি শ্রেণিতে তিন জনকে পুরস্কার প্রদান করতে হবে।

হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য সকল শিক্ষকের করণীয়ঃ
ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন C.W,H.W and C.T খাতায় লিখে থাকে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকগণ প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর  C.W এবং H.W খাতা যত্নসহকারে দেখবেন এবং অসুন্দর লেখা কেটে ছাত্রছাত্রীর কাছে গিয়ে তাকে দেখিয়ে সুন্দর করে লিখে দেবেন।

****  প্রথম শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিগুলোতে প্রতিদিন কালিবিহীন কলম দিয়ে ১৫ লাইন করে দাগ  টেনে লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

**** পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণিতে যে সকল শিক্ষার্থীদের লেখা তুলনামূলক খারাপ তাদেরকে কিছু বর্ণ শিখিয়ে উপরিউক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে হাতের লেখা ভাল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখকঃ
মোঃ সাজেদুর রহমান
সুন্দর হাতের লেখা ট্রেইনার
গাজীপুর শাহীন ক্যাডেট শাখা
















শেয়ার করুন

Author:

আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।

0 coment rios: