শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯

স্তন ক্যান্সারঃ কারণ,লক্ষণ,উপসর্গ,করনীয়,প্রতিকার,প্রতিরোধ ও চিকিৎসা।

স্তন ক্যান্সারঃ কারণ,লক্ষণ,উপসর্গ,করনীয়,প্রতিকার,প্রতিরোধ ও চিকিৎসা।

স্তন ক্যান্সার নারীদের একটি পরিচিত রোগ। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই এ রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে স্তনের ক্যান্সার সারানো যায়। তবে ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণত তা সারানো যায় না। কিন্তু এ রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের পর স্তন ক্যান্সারের অবস্থান।

সারা বিশ্বে নারীমৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো স্তন ক্যান্সার। প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে একজনের স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং আক্রান্ত প্রতি ৩৬ জন নারীর মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একজনের। আমাদের দেশে ক্যান্সারে যত নারীর মৃত্যু হয়, তার অন্যতম কারণও স্তন ক্যান্সার। প্রতি ৬-৭ মিনিটে একজন নারী এতে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১১-১২ মিনিটে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী মারা যায়।

Breast Cancer: Causes, Symptoms, Remedies, Prevention, and Treatment:

কিন্তু এতকিছুর পর ও আমাদের সমাজে স্তন ক্যান্সার নিয়ে রয়েছে পর্যাপ্ত সচেতনতার অভাব। আর এই সচেতনতার অভাবে অনেকের একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ছে এটি। অথচ ঘরে বসেই সহজে একজন নারী তার স্তন পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এতে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই নির্ণয় করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হলে ক্যান্সারের সাথে লড়াইয়ে জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


আমাদের দেশে ক্যান্সারে যত নারীর মৃত্যু হয়, তার দ্বিতীয় কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সার আসলে এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা স্তনের কোষগুলো থেকে শুরু হয়। স্তন ক্যান্সার এমনই এক ধরনের অসুখ যা প্রতিরোধের সেভাবে কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই।

তাছাড়া এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই কারণগুলো—

স্তন ক্যান্সারের কারণঃ(Causes of breast cancer) 

স্তন ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করা এখনো সম্পূর্ণভাবে সম্ভব হয়নি। কিছু নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয় খুব ছোট ছোট জীবকোষ দিয়ে। ক্যান্সার এসব জীবকোষের রোগ। স্বাভাবিকভাবে জীবকোষের বিভাজন ঘটে সুশৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে। যদি কোনো কারণে এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাহলে জীবকোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভক্ত হয়ে একটি পিণ্ড সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় টিউমার।

স্তনে দুই ধরনের টিউমার হতে পারে। সেগুলো হচ্ছে-

১.বিনাইন:

বেশির ভাগ স্তন টিউমার বিনাইন হয়। যা ক্ষতিকর নয়। কিছু বিনাইন টিউমার স্তনক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২.ম্যালিগন্যান্ট :

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে এমন ধরনের ক্যান্সার জীবকোষ থাকে, যা চিকিৎসা না করা হলে স্তনের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো রক্তপ্রবাহ কিংবা লসিকার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এসব জীবকোষ নতুন স্থানে পৌঁছে নতুন টিউমার সৃষ্টি করতে পারে। এ নতুন টিউমারকে বলা হয় মেটাস্ট্যাটিক টিউমার।

স্তন ক্যান্সারের কারণগুলো বিস্তারিত উল্লেখ করা হলঃ

  1.  মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে বেশি।
  2.  যত বয়স বৃদ্ধি হতে থাকে, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ততোই বাড়তে থাকে। অল্প বয়সের মহিলাদের চেয়ে বয়স্ক মহিলাদের বিশেষ করে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
  3. পূর্বে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে: যদি কারো পূর্বে একটি স্তনে ক্যান্সার হয়ে থাকে, তবে তার অন্য স্তনেও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  4. পরিবারে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে: যদি কারও মা, বোন অথবা মেয়ের স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে তার স্তনে ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেক গুণ বেশি। তবে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছে, এমন ব্যক্তিদের অধিকাংশরই কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই।
  5.  শিশু অথবা তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক তেজস্ক্রিয়/বিকিরণ রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা করলে পরবর্তী জীবনে তার স্তন ক্যান্সারের বিকাশের সম্ভাবনা থাকে।
  6.  মাত্রাতিরিক্ত ওজন (অথবা মোটা) স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন করে, যা ক্যান্সারের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।
  7. ১২ বছর বয়স হওয়ার আগে ঋতুস্রাব হলে তা স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
  8. দেরিতে মেনোপজ: ৫৫ বছর বয়সের পর যদি মেনোপজ হয়, তা স্তন ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে।
  9. ৩৫ বছরের পরে যদি কোনো মহিলা প্রথম সন্তান জন্ম দেয় তবে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  10. ঋতুজরার লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহের জন্য যেসব মহিলা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরনে মিলিত হরমোনের চিকিৎসা নেন, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
  11. অতিরিক্ত মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

এসকল ঝুঁকি থাকলে নারীদের সতর্ক থাকতে হবে ও নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করতে হবে।

স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ ঃ(Symptoms of breast cancer)

  1. স্তনের ভেতরে পিণ্ড অথবা স্তন পুরু হয়ে যাওয়া।
  2. স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত নিঃসরিত হওয়া।
  3. স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হওয়া।
  4. স্তনের উপরের ত্বকের পরিবর্তন হওয়া (যেমন: গর্ত হয়ে যাওয়া)।  
  5. স্তনের বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। 
  6. স্তনের বোঁটার চামড়া কুচকে যায় অথবা চামড়া ওঠে যাওয়া। 
  7. স্তনের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া।
উপরোক্ত যেকোনো ধরনের লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পরবর্তীতে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারবেন এটি স্তন ক্যান্সার কি না। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীর সুস্থ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি, তাই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে কি না।


স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায়ঃ
(Ways to Prevent Breast Cancer)

  1. রিক্স ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন: ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
  2. যে সমস্ত নারীরা শিশুদের স্তন্যপান করান, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কম থাকে।
  3. ৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
  4. টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।
  5. সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।
  6. ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
  7. যিনি রোজ নিয়ম করে শরীর চর্চা করেন, তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
  8. সমীক্ষা বলছে, সপ্তাহে ৭৫ থেকে ১৫০ মিনিট দ্রুতবেগে হাঁটলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
  9. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বিশেষত, স্থূলতার সাথে স্তন ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে। 
  10. সবজি জাতীয় খাবার যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে। এ ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
  11. অতিরিক্ত মদ্যপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
স্তন ক্যান্সার কোনো লজ্জার বিষয় নয় বা কোনো গোপন রোগ নয়। প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, সেটাকে লজ্জার বা গোপন রোগ ভাববার আর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:(Breast Cancer Treatment)

সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।
আপনার এই ব্যাপারে কোন মতামত থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে ভুলবেন না।


শেয়ার করুন

Author:

আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।

0 coment rios: