রক্তচাপ সম্পর্কে আমাদের যতসব ভুল ধারণাঃ
উচ্চ রক্তচাপের কারণে বড় বড় রোগ যেমন স্ট্রোক, কিডনি রোগ, অন্ধত্ব ইত্যাদির প্রধানতম ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন যার উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিন্তু তারা এই বিষয়ে জানেন না বা গুরুত্ব দেন না। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে নানারকম ভুল ধারণাও পোষণ করেন। আসুন জেনে নিই আমাদের ভুল ধারণাগুলো কী কী।
উচ্চ রক্তচাপ কেবল বয়স্কদের সমস্যা?
অনেকের ধারণা, বয়স বেশি না হলে রক্তচাপ মাপার দরকার নেই। কেননা, উচ্চ রক্তচাপ বড়দের হয়। ধারণাটি ভুল। উচ্চ রক্তচাপ অপেক্ষাকৃত কম বয়সেও হতে পারে। এমনকি তরুণ-যুবাদেরও হতে পারে। তাই মাঝেমধ্যে সবারই রক্তচাপ মাপা উচিত। আবার বয়স বাড়লে রক্তচাপ একটু বাড়তেই পারে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এমনটাও ভাবেন অনেকে। এ ধারণাও ভুল। যেকোনো বয়সেই রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার ওপর যাক না কেন, তার চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
রক্তচাপ বাড়লে ওষুধ খাই:
অনেকেই বলেন, রক্তচাপ যখন বাড়তি থাকে, তখনই কেবল ওষুধ খাই। তারপর স্বাভাবিক হয়ে এলে আর খাই না। এটা বিপজ্জনক। রক্তচাপের ওষুধ সাধারণত নিয়মিত খেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ বন্ধ করা বা মাঝেমধ্যে বাদ দেওয়া চলবে না। রক্তচাপ বেশি কমে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের মাত্রা বা ধরন পাল্টানো যায়।
তেঁতুল বা টক খেলে রক্তচাপ কমে যায় একেবারেই ভ্রান্ত ধারণাঃ
রক্তচাপ বাড়লে তেঁতুল গুলে খান অনেকে, অনেকে লেবু চিপে খান। এতেই নাকি রক্তচাপ কমে যায়। এই বিশ্বাসের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। বরং তেঁতুল ও টক-জাতীয় জিনিস লবণসহযোগে খেলে আরও রক্তচাপ বাড়তে পারে।
সমস্যা নেই মানে রক্তচাপ স্বাভাবিক?
মাথা-ঘাড় ব্যথা করে না, মাথা ঘোরে না, ঘুমও ভালো হয়, এসব সমস্যা নেই মানেই আমার উচ্চ রক্তচাপ নেই, এ কথাটাও ভুল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ নেই। রুটিন চেকআপেই তা ধরা পড়ে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা উচিত।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ডিম দুধ খাওয়া নিষেধ?
উচ্চ রক্তচাপের রোগীর বাড়তি লবণ খাওয়া একেবারেই নিষেধ। অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার, যেমন আচার, চানাচুর, সসযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবারও খাওয়া যাবে না। কিন্তু ডিম, দুধে নিষেধ নেই। তবে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোক এড়াতে চর্বিযুক্ত ও তেলে ভাজা পোড়া খাবার কম খাওয়া উচিত।
এক ওষুধ বেশি দিন খাওয়া ঠিক নয়ঃ
অনেকেই অনেক বছর ধরে কোনো একটি ওষুধ খাচ্ছেন ও তাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও তা বদলে ফেলতে চান। কেননা, এক ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া হয়তো ঠিক নয়। এটাও ভুল ধারণা। কোনো কারণ ছাড়া ওষুধ পরিবর্তন করার দরকার নেই। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণই আসল কথা।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ
জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
0 coment rios: