প্রবাদে আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে কথাটি কিন্তু একবারেই মিথ্যা নয়। এমন অনেক গুণীজন থাকেন যারা একসাথে অনেক কিছু সামলাতে পারেন।তারা মূলত বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও এমন বহুমুখী প্রতিভার বেশ কয়েকজন গুণী শিল্পী রয়েছেন, যারা একই সাথে ভাল অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি ভাল কণ্ঠশিল্পীও, অনেকে আবার একই সাথে ভাল নাচতেও জানেন। আজ আমরা আলোচনা করবো এমন ১০ জন তারকা শিল্পীদের নিয়ে যারা ন্যূনতম একটি সিনেমাতে হলেও পুরোদস্তুর গায়ক থেকে নায়ক বা গায়িকা থেকে নায়িকাতে পরিণত হয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জেমস, মিলা, সালমা, কণা, পড়শীসহ অনেক শিল্পীরাই সিনেমায় কাজ করলেও তাদের পর্দা উপস্থিতি ছিল অতিথি শিল্পীর হিসেবে। তাই তাদের এই তালিকায় রাখা হয়নি। তবে চলুন তাদেরকে নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক । ১০ জন তারকা যারা গায়ক থেকে নায়ক ও গায়িকা থেকে নায়িকা হয়েছেন।
১০ জন তারকা যারা গায়ক থেকে নায়ক ও গায়িকা থেকে নায়িকা হয়েছেন।
- ১০। তাহসান রহমান খান
- ৯। এস ডি রুবেল
- ৮। রাশেদ উদ্দিন আহমেদ তপু
- ৭। নুসরাত ইমরোজ তিশা
- ৬। মমতাজ
- ৫। ইরিন জামান
- ৪। মেহের আফরোজ শাওন
- ৩। খান আসিফুর রহমান আগুন
- ২। রুনা লাইলা
- ১। নায়ক জাফর ইকবাল
১০ তাহসান রহমান খানঃ
বর্তমানে নাট্যজগতে বেশ জনপ্রিয় মুখ তাহসান রহমান খান। ১৯৯৮ সালে “ব্ল্যাক” ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সঙ্গীতের দুনিয়ায় জড়িয়ে পড়েন তাহসান রহমান খান। পরবর্তীতে ব্যান্ড ত্যাগ করে নিজস্ব ধারায় গান গাইতে শুরু করেন। প্রেমাতাল, আলো আলো, কে আঁকে অন্য ছবি প্রভৃতি মন ভোলানো গান গেয়ে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। গানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধারাবাহিক ও একক নাটক-টেলিফিল্মে এবং উপস্থাপনাতেও তার পারফর্মেন্স দর্শকদের মনমুগ্ধ করে। ২০১৯ সালে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের “যদি একদিন” সিনেমার মাধ্যমে তার ঢালিউডে চিত্রনায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে। ছবিতে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল।
৯ এস ডি রুবেলঃ
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এস ডি রুবেলের আসল নাম সাধন ধর রুবেল। আমার একটা সাথি ছিল দেশের বাড়িতে, লাল বেনারসী, অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবনের মত জনপ্রিয় বিরহের গানের এই শিল্পী সমসাময়িক গায়কদের মধ্যে দেখতে বেশ সুদর্শন। তাই অনেক পরিচালকই তাকে নায়ক হিসেবে সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দিতেন। শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে মনতাজুর রহমান আকবর রহমান পরিচালিত “এভাবেই ভালোবাসা হয়” সিনেমাতে তাকে শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করেন। তবে সিনেমাটি আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয়নি। স্বপন চৌধুরী পরিচালিত আপকামিং “বৃদ্ধাশ্রম” সিনেমাতে তাকে আবার দেখা যাবে চিত্রনায়িকা ববি’র বিপরীতে।
৮ রাশেদ উদ্দিন আহমেদ তপুঃ
জনপ্রিয় গায়ক তপুর “এক পায়ে নূপুর তোমার”, “মেয়ে, তুমি এখনো আমায় বন্ধু ভাবো কি”, “একটা গোপন কথা ছিল বলবার বন্ধু”এমনই বেশকিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তপু। খুব অল্প সময়েই তরুণ-তরুণীদের পছন্দের তালিকায় চলে আসেন। যার ধারাবাহিকতায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাকে কাস্ট করেন “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার” সিনেমায় নায়িকা তিশা’র বিপরীতে। ২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটিই তপু’র একমাত্র সিনেমা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সিনেমাটি শখের বশে করলেও তপু সমালোচকদের পছন্দে সেরা অভিনেতা হিসেবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
৭ নুসরাত ইমরোজ তিশাঃ
অনেকেই হয়তো জানেন না যে গান দিয়েই জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিশা’র প্রথম পথচলা শুরু হয়েছিল। মাত্র ৫ বছর বয়সেই সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন তিশা। সুন্দর গান গেয়ে ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। সেই সময় তিশা এঞ্জেল ফোর নামে একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে মডেলিং ও নাটকে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় গান থেকে কিছুটা দূরে সরে আসেন তিনি। ২০০৯ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার” সিনেমার মধ্য দিয়ে তার ঢালিউডে অভিষেক হয়। তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর আপকামিং সিনেমা হচ্ছে শনিবার বিকেল ও মায়াবতী।
আরও পড়ুনঃ বিয়ে করলে কি ম্যাচিউরিটি বা পরিপক্বতা বাড়ে? কেন বা কীভাবে?
৬ মমতাজঃ
বাংলাদেশের সুর সম্রাজ্ঞী খ্যাত মমতাজ বেগম আরেকজন কিংবদন্তী গায়িকা। ৭০০+ একক এ্যালবামে কণ্ঠ দেওয়া এই জনপ্রিয় শিল্পী পালা গান থেকে শুরু করে প্লেব্যাক পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই তিনি নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ সালে তার যখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তখন পরিচালক উত্তম আকাশ তাকে নিয়েই তার বায়োপিক সিনেমা “মমতাজ” নির্মাণ করেছিলেন। এই ছবিটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন ফরীদি ও হেলাল খান। তবে ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয়নি।
৫ ইরিন জামানঃ
খুব ছোটবেলায় মায়ের কাছে সঙ্গীতের ব্যাপারে হাতেখড়ি নেন ইরিন জামান। সিনেমাতে আসার আগে “মধুরাত” নামে তার একটি একক গানের এ্যালবামও বাজারে প্রকাশ হয়েছিল। বড় বোন মৌসুমীর মত তারও ঢালিউডে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “অনন্ত ভালোবাসা” নামের সেই সিনেমাটি ছিল ইরিন জামানের প্রথম সিনেমা। সেই সিনেমাটিও চিত্রনায়ক শাকিব খানেরও প্রথম সিনেমা ছিল। এরপর অনিয়মিতভাবে সোনার ময়না পাখি, উল্টা পাল্টা ৬৯ প্রভৃতি সিনেমায় কাজ করলেও ইরিন শেষ পর্যন্ত ফিরে গেছেন গানের জগতে।
৪ মেহের আফরোজ শাওনঃ
শাওন ছোটবেলা থেকেই নাচের সাথে গানের চর্চা করতেন। “এসো গান শিখি” টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তার প্রথম টেলিভিশনে আসা। তিনি ১৯৮৯ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে তুরস্কে গিয়ে রেডিওতে গান করেন। ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের”শ্রাবন মেঘের দিন” সিনেমার মাধ্যমে তার ঢালিউডে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীতে তিনি বেশ কিছু সিনেমা করেন যেমন দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া ও আমার আছে জল সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটিতে প্লেব্যাকও করেন। ২০১৬ সালে তিনি “কৃষ্ণপক্ষ” নামের একটি সিনেমাও পরিচালনা করেছিলেন।
৩ খান আসিফুর রহমান আগুনঃ
বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমানের পুত্র আগুনের সঙ্গীত জীবন শুরু হয় “সাডেন” ব্যান্ডের ভোকাল হিসেবে। সোহানুর রহমান পরিচালিত ১৯৯২ সালে সালমান শাহের “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” সিনেমায় প্লেব্যাকের মাধ্যমে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এরপরই দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আগুন। ১৯৯৭ সালে বাবা খান আতাউর রহমানের “এখনো অনেক রাত” সিনেমায় সহ নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে তার ঢালিউডে প্রথম অভিষেক হয়। এরপর তিনি নিয়মিত প্লেব্যাকের পাশাপাশি ঘেটুপুত্র কমলা, ৭১ এর মা জননী ও অমি ও আইসক্রিমওয়ালা সিনেমায় অভিনয় করেন। অরুণ চৌধুরীর আপকামিং সিনেমা “মায়াবতী”তে নুসরাত ইমরোজ তিশার বিপরীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে আবার দেখা যাবে।
২ রুনা লায়লাঃ
সঙ্গীত পছন্দ করেন অথচ রুনা লায়লাকে চেনেন না, দক্ষিণ এশিয়াতে অন্তত এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। বাংলাদেশের মত ভারত আর পাকিস্তানেও বেশ জনপ্রিয় রুনা লাইলা। তার শিল্পী ইমেজকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৫ সালে চাষী নজরুল ইসলাম তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন একটি রোমান্টিক থ্রিলার মুভি “শিল্পী”। ১৯৯২ সালের আমেরিকান মুভি The Bodyguard এর আদলে নির্মিত এই সিনেমাটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন তার স্বামী আলমগীর। এরপর তাকে আর কোন সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুনঃ বিয়ের আগে প্রত্যেকের জানা উচিত নয়তো বিরাট ভুল করবেন। ১ জাফর ইকবালঃ
ঢালিউডের অন্যতম স্টাইলিশ হিরো জাফর ইকবালকে অনেকেই শুধুমাত্র অভিনেতা হিসেবে জানে। কিন্তু তার আরেকটি পরিচয় হল তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী ও ভাল গিটার বাদক। খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী আনোয়ার পারভেজ ও শাহনাজ রহমতুল্লাহ ছোট ভাই হিসেবে তিনি ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের অনুকূল পরিবেশে বড় হয়েছেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৬ সালে "Rambling Stones" নামের একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন।তখন তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কনসার্ট করতেন। এরই মধ্যে একদিন খান আতাউর রহমানের নজর কাড়েন তিনি। ১৯৬৯ সালে খান আতা’র “আপন পর” সিনেমায় নায়িকা কবরীর বিপরীতে তার ঢালিউডে অভিষেক হয়। এরপর “বদনাম” সিনেমার “হয় যদি বদনাম হোক”সহ আরো বেশকিছু জনপ্রিয় গানে প্লেব্যাক করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবেও তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। ১৯৯১ সালের ২৭ এপ্রিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এই চিরসবুজ চিত্রনায়ক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
0 coment rios: