কথায় বলে, গান হলো মানুষের মনের খোরাক। হাসি,আনন্দ,বেদনা ও কষ্ট নিয়েই মানুষের জীবন। কেবলমাত্র গানের মাধ্যমেই এই সকল অনুভূতি গুলোকে মানুষের হৃদয়ে স্পর্শ করে। আমাদের দেশে বেশ কয়েকজন গুণী ও সুমধুর কণ্ঠের গায়িকা রয়েছেন। তাদের গানের সুমধুর কণ্ঠে হৃদয় স্পর্শ করে। আজ আমি দেশের সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকাদের নিয়ে আলোচনা করবো।
সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকা
- ১০। সালমা আক্তার
- ৯। বেবী নাজনীন
- ৮। ডলি সায়ন্তনী
- ৭। দিলশাদ নাহার কনা
- ৬। ফরিদা পারভীন
- ৫। মমতাজ
- ৪। রুমানা মোরশেদ কনক চাঁপা
- ৩। সাবিনা ইয়াসমিন
- ২। রুনা লাইলা
- ১। ফিরোজা বেগম
১০ সালমা আক্তারঃ
"ফোক" গানের শিল্পী হলেন সালমা আক্তার।কুষ্টিয়ায় কেটেছে তাঁর শৈশব।ছোটবেলায় গাছে উঠে গান গাইতেন তিনি।মাত্র ১৩ বছর বয়সেই টেলিভিশনে একটি ট্যালেন্ট হান্ট শোতে অংশ গ্রহণ করেন। তখন প্রতিযোগীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
২০০৬ সালের সে প্রতিযোগিতায় বিচারক ও দর্শকদের এসএমএসে প্রথম হন সালমা।এর পর পাল্টে যায় তাঁর জীবন।এখন পর্যন্ত ৭টি একক অ্যালবাম সহ মোট ১১টি অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে তাঁর।মাঝে বিয়ে এবং সন্তান জন্মের পর গানে কিছুটা বিরতি দেন সালমা।বর্তমানে আবার গানে ফিরেছেন নতুন অ্যালবাম দিয়ে।
৯ বেবী নাজনীনঃ
বেবী নাজনীন বাংলাদেশের একজন নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি অনেক গান গেয়েছেন। তিনি ২০০৩ সালে শ্রেষ্ঠ মহিলা গায়ক হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বেবী নাজনীনের কর্মজীবন সঙ্গীতময়। তার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘ঘুম ভাঙ্গায়া গেলরে মরার কোকিলে’ উল্লেখযোগ্য, এছাড়া ‘দু’চোখে ঘুম আসে না’, ‘কাল সারারাত ছিল স্বপ্নেরো রাত’, ‘এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল', জনপ্রিয় গান।
৮ ডলি সায়ন্তনীঃ
ডলি সায়ন্তনী হলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী এবং ব্যবসায়ী। তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি ১৫টি একক অ্যালবাম, ১০০টির উপরে দ্বৈত ও মিশ্রিত অ্যালবামের কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি ৭০০টির উপরে বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।তিনিই একমাত্র গায়িকা যিনি অসংখ্য মুভি গানে অংশগ্রহণ করেছেন।
৭ দিলশাদ নাহার কনাঃ
দিলশাদ নাহার কনা একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী।নিজের প্রথম একক অ্যালবাম 'জ্যামিতিক ভালোবাসা'র টাইটেল গানটির মাধ্যমেই কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আলোচনায় এসেছিলেন সুকণ্ঠী গায়িকা কনা। এরপর একে একে আরও দুটি একক অ্যালবামের মাধ্যমে বেশ কিছু হিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি।ইমন সাহার হাত ধরে একটি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ পান কণা। পরবর্তী সময়ে প্রায় ৫০০ জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। 'আভি তো লামহে' শিরোনামে একটি হিন্দি বিজ্ঞাপনেও কণ্ঠ দিয়েছেন কণা। বাংলা ও হিন্দি ছাড়াও সিংহলি এবং আরবি ভাষায়ও জিংগেল করেছেন কনা। তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাচসাস পুরস্কার,বাবিসাস পুরস্কার ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার।
৬ ফরিদা পারভীনঃ
ফরিদা পারভিন (ডিসেম্বর ৩১, ১৯৫৪) বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী। তিনি মূলত পল্লীগীতি গেয়ে থাকেন বিশেষ করে তিনি লালন সঙ্গীতের জন্য বেশি জনপ্রিয়। জন্ম নাটোরে হলেও বড় হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। ১৯৬৮ সালে তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল সঙ্গীতের জন্য নির্বাচিত হন । নজরুলগীতি দিয়ে শুরু করলেও তিনি পরবর্তীতে দেশাত্মবোধক গেয়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ১৯৭৩ সালের দিকে।তিনি ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজ ২০০৮ এ সেরা সঙ্গীতের জন্য পুরষ্কৃত হন। এছাড়া একুশে পদক ১৯৮৭ সালে পেয়েছিলেন এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পদকে ছায়াছবির গানে সেরা কন্ঠদানকারী হিসাবে ১৯৯৩ সালে পদক পেয়েছেন।
৫ মমতাজঃ
বাংলাদেশের সুর সম্রাজ্ঞী খ্যাত মমতাজ বেগম আরেকজন কিংবদন্তী গায়িকা। ৭০০+ একক এ্যালবামে কণ্ঠ দেওয়া এই জনপ্রিয় শিল্পী পালা গান থেকে শুরু করে প্লেব্যাক পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই তিনি নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ সালে তার যখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, তখন পরিচালক উত্তম আকাশ তাকে নিয়েই তার বায়োপিক সিনেমা “মমতাজ” নির্মাণ করেছিলেন। এই ছবিটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন ফরীদি ও হেলাল খান। তবে ছবিটি আশানুরূপ ব্যবসাসফল হয়নি।
৪ রুমানা মোরশেদ কনক চাঁপাঃ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক শিল্পী রুমানা মোরশেদ কনক চাঁপা। একেবারে ছোট বেলাতেই গানে হাতে খড়ি। রেডিওতে কলকাকলি অনুষ্ঠান দিয়ে গান গাওয়া শুরু। বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানে ৭৮ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।
পরিবারেই ছিল সঙ্গীতের আবহ। বাবা সখ করে গান করতেন। তার কাছেই উৎসাহ পেয়েছেন গানের। গাই গাইতেন বড় বোনও। নতুন কুঁড়িতে পুরস্কার জেতার পর বাবাই তাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেয়ার সুযোগ করে দিলেন। তার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।নারী শ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক কন্ঠশিল্পী হিসেবে রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের পরে তিনিই একাধিক তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
৩ সাবিনা ইয়াসমিনঃ
বাংলাদেশের গানের জগতে অত্যন্ত পরিচিত নাম সাবিনা ইয়াসমিনের।এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজারের মত গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১২ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার ও আরও নানান সম্মাননা।
ছোটবেলায় খুবই চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন এ শিল্পী।মা ও বোনদের গানের মধ্য দিয়েই তাঁর গাওয়ার শুরু।প্রথমে ‘খেলাঘর’ নামে বেতার অনুষ্ঠানে ছোটদের গান করতেন সাবিনা ইয়াসমিন।বেতার ও চলচ্চিত্রে বড়দের গান করেন ১৯৬৭ সালে।বড়দের গানে যাত্রা শুরু হয় স্কুলে পড়ার সময়েই।
২ রুনা লাইলাঃ
সঙ্গীত পছন্দ করেন অথচ রুনা লায়লাকে চেনেন না, দক্ষিণ এশিয়াতে অন্তত এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। বাংলাদেশের মত ভারত আর পাকিস্তানেও বেশ জনপ্রিয় রুনা লাইলা। তার শিল্পী ইমেজকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯৫ সালে চাষী নজরুল ইসলাম তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন একটি রোমান্টিক থ্রিলার মুভি “শিল্পী”। ১৯৯২ সালের আমেরিকান মুভি The Bodyguard এর আদলে নির্মিত এই সিনেমাটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন তার স্বামী আলমগীর। এরপর তাকে আর কোন সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। তিনি বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন।
১ ফিরোজা বেগমঃ
ফিরোজা বেগম (২৮ জুলাই ১৯৩০ - ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪) বাংলাদেশের বিখ্যাত নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে। এছাড়াও তিনি
একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার ,সত্যজিৎ রায় পুরস্কার ,নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক , বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক, সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার), নজরুল একাডেমি পদক, চুরুলিয়া স্বর্ণপদক, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট, তিনি জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে "বঙ্গ সম্মান" পুরস্কার গ্রহণ করেন। ২৮ জুলাই ২০১৮ সালে তার ৮৮ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।
এক নজরে আরেকবার দেখুন, সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকা।
Sr No. | সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকা |
১ | ফিরোজা বেগম |
২ | রুনা লাইলা |
৩ | সাবিনা ইয়াসমিন |
৪ | রুমানা মোরশেদ কনক চাঁপা |
৫ | মমতাজ |
৬ | ফরিদা পারভীন |
৭ | দিলশাদ নাহার কনা |
৮ | ডলি সায়ন্তনী |
৯ | বেবি নাজনীন |
১০ | সালমা আক্তার |
নিচের ভিডিও টির মাধ্যমে সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকাদের দেখুনঃ
0 coment rios: