একজন কৌতুক অভিনেতা একজন হিরো বা খলনায়ক অভিনেতার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। শুধু বাংলাদেশের সিনেমাতেই নয়, বিশ্বের সব ধরণের ভাষার চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে কৌতুক পর্ব। ঢালিউডের সূচনালগ্ন থেকে বাংলা সিনেমায় কৌতুককে খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু নির্মম সত্য যে- বর্তমানে সিনেমাতে কৌতুক পর্ব আর তেমন দেখা যায় না। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে কৌতুকের মত বড় চরিত্রগুলো। এক কথায় চরম সংকটে পড়েছে ঢালিউড সিনেমার কৌতুক। আজ আলোচনা করবো স্বর্ণালি যুগের সেরা ১৫ জন বাঙালি কমিডিয়ান,বর্তমানের সেরা বাঙালি কৌতুক অভিনেতা,ঢালিউড কৌতুক অভিনেতা,কৌতুক অভিনেতাদের তালিকার মধ্যে রয়েছে খান জয়নুল, রবিউল, আশীষ কুমার লোহ, দিলদার, আনিসুর রহমান আনিস, টেলিসামাদ, সাইফুদ্দিন, হাবা হাসমত, ব্ল্যাক আনোয়ার , ববি, জ্যাকি আলমগীর, আফজাল শরীফ , কাবিলা, হারুন কিচিঞ্জার, চিকন আলী সহ অনেকেই। আজ তাদের নিয়েই আপনাদের মাঝে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।
সেরা ১৫ জন বাঙালি কৌতুক অভিনেতাঃ
সেরা ১৫ জন বাঙালি কৌতুক অভিনেতাঃ
- ১। খান জয়নুল
- ২। রবিউল
- ৩। আশীষ কুমার লোহ
- ৪।দিলদার
- ৫। আনিসুর রহমান আনিস
- ৬। টেলিসামাদ
- ৭। সাইফুদ্দিন
- ৮। হাবা হাসমত
- ৯।ব্ল্যাক আনোয়ার
- ১০। ববি
- ১১।জ্যাকি আলমগীর
- ১২। আফজাল শরীফ
- ১৩।কাবিলা
- ১৪। হারুন কিচিঞ্জার
- ১৫। চিকন আলী
- ১ খান জয়নুলঃ
বাংলাদেশীয় মুভির প্রথম দিকের কমেডিয়ান অভিনেতা ছিলেন খান জয়নুল। তিনি শুধু কমেডিয়ান হিসেবে নয় সহনায়কের ভূমিকায়ও অভিনয় করেছেন। দেশীয় চলচ্চিত্রে ৬০ এর দশকে যে কয়েকজন কৌতুক অভিনেতা ছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। নাচের পুতুল,ছন্দ হারিয়ে গেল,অবুঝ মন’এর মত ছবিগুলোতে কেবল ভ্রু আর বিভিন্ন অঙ্গি ভঙ্গিময়ে অনবদ্য অভিনয় করে এক হাস্যমুখর পরিবেশ তৈরি করেন।সে ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন’ সিনেমার কাহিনীকার এবং সংলাপ রচয়িতাও করেন যেখানে অভিনয় করেন সুমিতা দেবী, সুজাতা, খান জয়নুল ও আলতাফ। এ ছবিটিকে ঐতিহাসিক ছবি বলা যায় কারন এ ছবিতেই ছোট একটি চরিত্রে আমাদের নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এই কৌতুক অভিনেতা। ৪২ বছরের জীবনে তিনি প্রায় পঞ্চাশটির মতো সিনেমাতে অভিনয় করেন। যার মধ্যে মিশর কুমারী,অন্তরঙ্গ,মাটির মায়া,অশান্ত ঢেউ,দিনের পর দিন,স্মৃতি তুমি বেদনা,ময়না মতি,সাইফুল মুলুক বদিউজ্জামান,গোপাল ভাঁড়,মধু মিলন,ডাক পিয়ন ,সন্তান, পদ্মা নদীর মাঝি,দর্পচুর্ণ,সপ্তডিঙ্গা,মাটির মায়া,অশান্ত ঢেউ,দিনের পর দিন,সুতরাং,কাঁচকাটা হীরে এবং গাফ্ফার খান পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ ছবিটি ছিলো তার অভিনীত জীবনের শেষ ছবি।
রবিউলকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের সফল কৌতুক অভিনেতা হিসিবে আখ্যায়িত করা হয়। তার সিনেমার পর্দায় উপস্থিতিই দর্শকদের মনে আপনা আপনি হাসি চলে আসে। যেমন তার শরিরের গঠন তেমনি তার অঙ্গভক্তি ও সংলাপের পারদর্শিতা। এক কথায় বাংলা চলচ্চিত্রে কমেডিয়ান বলতে আমি রবিউলকেই বুঝি। প্রায় শতাধিক ছবিতে তার হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে অভিনয় করেন। আর তার অভিনয়ে অন্যতম আরেকটি গুণ ছিলো সে হাতির কানের মতো কান দুটোকে তালে তালে নাচাতে পারতেন। ১৯৫৯ সালে আকাশঁ বাড়ী,১৯৭৬ এ গুন্ডা ১৯৭৪ সালে আলোর মিছিল,১৯৭২ সালে চৌধুরী বাড়ী,১৯৬৯ এ নীল আকাশের নীচে ১৯৮০ সালে আলোচিত ছবি ছুটির ঘন্টা ইত্যাদি ছবিগুলো এ দেশীয় চলচ্চিত্রে সিনেমা প্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে। এগুলো তারই অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র।
৩ আশীষ কুমার লোহঃ
আশীষ কুমার লোহ একাধারে ছিলেন নাট্যকার,চিত্র নাট্যকার,লেখক,অভিনেতা ও কৌতুক অভিনেতা। অভিনয় জগতে বিভিন্ন মাধ্যমের সাথে তার ছিল বিচরণ। তিনি ১৯৩৭ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলায় এক সম্ভ্রান্ত সাংস্কৃতিকমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেই বাল্যকাল থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিলো যা তার এলাকায় বেশ সুনাম ছিলো। ৬০দশকের এই কমেডিয়ান অভিনেতা পাকিস্থান টেলিভিশন ঢাকার কেন্দ্রের কমেডিয়ান নাটক হীরা-চুন্নী-পান্নায় অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ৬০ দশকেই তিনি সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম ছবি ছিলো হারানো দিন। প্রতিটি চরিত্রকে তিনি অভিনয়ের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন এ জন্য তাঁর অভিনীত প্রতিটি চরিত্রই প্রাণবন্ত হয়ে উঠতো আর কৌতুক অভিনেতা হিসাবে তার স্থান অতি উচ্চেতে অবস্থান। তিনি তার জীবদ্দশায় প্রায় চল্লিশটিরও বেশী ছবিতে অভিনয় করেন যার মধ্যে আলী বাবা ৪০ চোর, মধুমালতী, শাস্তি, ঘরে বাইরে, পরিণীতা, কারওয়্যাঁ, বেগানা, ও কায়সে কঁহু (ঊর্দু সিনেমা) ভাওয়াল সন্ন্যাসী, নদী ও নারী, মৌচাক, সখী তুমি কার, কার বউ, আপন দুলাল, নয়ন তারা, অনেক দিন আগে, সুতরাং, অঙ্গার, অচেনা অতিথি, রূপালী সৈকতে, ইত্যাদি ছবিগুলো তাকে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৩ নভেম্বর মাত্র ৫৭ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা।
৪ দিলদারঃ
বাংলাদেশীয় চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি হাসির অভিনয়ে দর্শকদের মন কেড়েছিলেন বিশিষ্ট কৌতুক অভিনেতা দিলদার। তিনি জন্ম গ্রহন করেন ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে। ১৯৭২ সাল তিনি ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রে প্রথম প্রবেশ করেন। মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘কেন এমন হয়’। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল মাত্র এস এস সি পাস। তার অসংখ্য ছবিতে দর্শকদের হাসিয়ে গেছে তার কৌশলময় কৌতুক অভিনয় দিয়ে। তিনি 'আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন যার নায়ক ছিলেন তিনিই।২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই আমাদের মাঝ থেকে চিরতরে বিদায় নেন।
৫ আনিসুর রহমান আনিসঃ
আনিসুর রহমান ১৯৬০ সালে বিষ কন্যা ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি অভিনেতা হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। পরে ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এইতো জীবন’। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে অভিনয় করেন। তিনি নবাব সিরাদ্দৌল্লা মঞ্চ নাটক করে ব্যাপক আলোচিত হন।বাংলাদেশ টেলিভিশনে মরহুম ফজলে লোহানীর ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “যদি কিছু মনে না করেন”এ কইনচান দেহি কৌতুক পর্বে অভিনয় করে তার কৌতুক অভিনেতা হিসাবে দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন,আমি একজন সফল মানুষ। আমি নিজে হাসি অন্যকে হাসাই ,দুঃখ বলে কিছু নেই আমার জীবনে। জীবন সম্পর্কে এমন সাহসী উক্তির জনকের জন্ম ১৯৪২ সালে জলপাইগুড়িতে। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে “কুলি ১৯৯৭সালে, অজান্তে ১৯৯৬ সালে, চাকর ১৯৯২ সালে, বড় বাড়ীর মেয়ে ১৯৮২ সালে, মহানগর ১৯৮১ সালে, গুন্ডা ১৯৭৬সালে,অদৃশ্য শত্রু ২০১৪সালে, সীমারেখা ২০১৪ সালে,স্বামী ভাগ্য ২০১২সালে কোটি টাকার প্রেম ২০১১সালে যেমন জামাই তেমন বউ ২০১০সালে এবাদত ২০০৯ সালে, মৃত্যুর ফাঁদে ২০০৯ সালে, কোটি টাকার ফকির ২০০৮ সালে, বড় ভাই জিন্দাবাদ ২০০৮ সালে, সমাধি ২০০৮ সালে, আমি বাঁচতে চাই ২০০৭ সালে, কোটি টাকার কাবিন ২০০৬ সালে, মমতাজ ২০০৫ সালে, চেয়ারম্যান ২০০১ সালে ইত্যাদি।তিনি শেষ জীবনে অনেক অর্থে কষ্টে ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ঠিক মত তার চিকিৎসা করাতে পারেননি অবশেষে ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের নিজ বাসায় মৃত্যু বরণ করেন।
৬ টেলিসামাদঃ
ডেগেরো ভিতরে ডাইলে চাইলে উতালী গো সই ,দিওয়ানা বানাইয়া খাইলো মোরে গিল্লা ইত্যাদি গান এবং অভিনয়ে এমন দক্ষ কৌতুক অভিনেতা খুব কমই জন্মায়। এ যাবৎ কাল প্রায় ৫০টি গান তিনি গেয়েছেন। টেলিসামাদ তেমনি একজন অভিনেতা এবং কৌতুক অভিনেতা যিনি অভিনয় জগতের সব স্থানেই তার বিচরণ রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনেও ছিলো তার সমান জনপ্রিয়তা। বিটিভির ক্যামেরাম্যান মোস্তফা মামুন,আবদুস সামাদ বাদ দিয়ে (টেলি+সামাদ)=টেলিসামাদ নামটা দিয়েছিলেন। সেই থেকেই তাকে সবাই টেলিসামাদ নামেই চেনেন। তার জন্ম ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারী,মুন্সীগঞ্জ জেলার নয়াগাঁও এলাকায়। ১৯৭৩ সালে তার প্রথম ছবি ‘কার বউ’ দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন।প্রায় চার দশক ধরে সে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার বেড়ে উঠাটাই ছিলো সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। বড় ভাই বিখ্যাত চারু শিল্পী আব্দুল হাইয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পড়াশোনা করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারু কলায়। সংগীতেও রয়েছে এই গুণী অভিনেতার পারদর্শিতা। ‘মনা পাগলা’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন। তিনি দর্শকের কাছে মুলত পরিচিতি পান আমজাদ হোসেনের‘নয়নমণি’ ছবির মাধ্যমে।টেলিসামাদ এক সময় বাংলা চলচ্চিত্রে রবিউল,খান জয়নুল,আশীষ কুমার লৌহ,আনিস,লালু,হাসমতের মতো গুণী কৌতুক অভিনেতাদের সাথেও অভিনয় করেন। সবাইকে হাসিয়ে যিনি অন্যের দুঃখ কষ্টকে ভুলিয়ে দিতেন তিনিই আজ তার জীবন সায়েহ্নে এসে মুখের হাসি হারিয়ে ফেলেছেন। ২০১৫ সালে তার সব শেষ ছবি জিরো ডিগ্রীর পর তিনি বহু অর্থ কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছিলেন।গতকাল বেলা দেড়টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
৭ সাইফুদ্দিনঃ
কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন ১৯২৭ সালে ভারতের আসামে ধুবড়ী জেলা তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি বাংলাদেশী নাগরিক। ১৯৫৬ সালে আব্দুল জব্বার খান নির্মিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বাংলা ও সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনেতা হিসেবে অভিষেক ঘটে। তিনি ৬০ দশক থেকে ৯০ এর দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করেছিলেন। তিনি প্রায় চার শত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৭৯ সালে সাইফুদ্দিন সুন্দরী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই গুণি অভিনেতা ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এ ইন্তেকাল করেন।
৮ হাবা হাসমতঃ
হাবা হাসমত হিসেবে তিনি ছিলেন অধিক জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা। তার চেহারার মধ্যে হাবা হাবা ভাব ছিল যার ফলে অভিনয় করলে সেটি আরও বেশি ফুটে উঠত। তার অভিনীত চরিত্রগুলো ছিলো অধিকাংশই সহজ সরল হাবা টাইপের। তার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে-১৯৮৩ সালে নতুন বউ,১৯৭৪ সালে আলোর মিছিল,অবুঝ মন ১৯৭২সালে ও নীল আকাশের নীচে ১৯৬৯ সালে। হাসির এ মানুষটি ২০০৪ সালে ১০ নভেম্বর অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।
৯ ব্ল্যাক আনোয়ারঃ
ব্ল্যাক আনোয়ার ১৯৪১ সালে ঢাকার সুত্রাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সোনা মিয়াও ছিলেন এক জন অভিনয় শিল্পী। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে -সুয়ো রানী দুয়ো রানী’,অনন্ত প্রেম, সাক্ষী’,সৎভাই’সহ বহু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি এবং বিটিভিতে বহু নাটকেও তিনি সমান তালে তার অনবদ্য অভিনয় চালিয়ে যান। সর্ব শেষ তিনি ‘কাবলিওয়ালা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। হাসির এ মানুষটি সবাইকে কাঁদিয়ে ২০০৭ সালে ১০ নভেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান।
১০ ববিঃ
ববি বাংলা চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি আট শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ববির পুরো নাম ফাইয়াজ আহমেদ। তিনি পুরনো ঢাকার গেন্ডারিয়ায় বেড়ে ওঠেন। তার জনপ্রিয় উক্তিগুলো হলো আসেন যে,বসেন যে, খাইছেন যে, গেছেন যে, তাছাড়াও তিনি বিভিন্ন ভঙ্গিময়ে কথা বলে।
১১ জ্যাকি আলমগীরঃ
জ্যাকি আলমগীরকে দর্শক একজন কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই বেশি চিনেন। তার অভিনয়ে দর্শক হাসিতে লুটিয়ে পড়েন। দর্শককে হাসাতেই ভালোবাসেন জ্যাকি আলমগীর। তিনি বলেন, হাসি দিয়ে মানুষের দুঃখকে জয় করতে পারা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু আমি না হয় আমার অভিনয় দিয়ে দর্শককে দুঃখ ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। অভিনতো হিসেবে এখানেই আমার সুখ। আজীবন অভিনয় করে যেতে চাই। আমার কাছে অভিনয়ই ঘর-সংসার। অভিনয়ই আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা। জ্যাকি আলমগীরের আসল নাম আলমগীর হোসেন। প্রয়াত পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘রক্তের বন্দী’ চলচ্চিত্রে যখন প্রথম অভিনয় করেন তখন তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন জ্যাকি আলমগীর। এরপর খোকনের প্রায় সবগুলো চলচ্চিত্রেই তিনি অভিনয় করেন। কাজী হায়াতেরও প্রতিটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। জ্যাকি আলমগীর এ পর্যন্ত সাত শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৮২ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত। নিজের অভিনীত প্রিয় কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম বলতে হলো লড়াকু, বজ্রমুষ্ঠি, আম্মাজান, প্রেম দিওয়ানা, কাবুলিওয়ালা’সহ আরো কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম উল্লেখ করেন। জ্যাকি জানান তিনি যে ক’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘আরন্যক’ নাট্যদলের সাথে প্রথম অভিনয়ে সম্পৃক্ত হন তিনি। এরপর তরঙ্গ আনোয়ারের ‘নভোথিয়েটার’ নাট্যদলের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এই দলের হয়ে তিনি ‘নীল নগরী’ ‘সাগর সেচা মানিক’সহ বেশকিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। তার রচিত নাটক ‘দুই বুয়ার ঝগড়া’ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রয়াত কৌতুকাভিনেতা দিলদার। তার রচিত ‘গৃহকর্মী’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন আহমেদ শরীফ। জ্যাকি আলমগীর দুটি চলচ্চিত্রের প্রযোজনায় সহকারী ছিলেন। তার প্রযোজিত দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন শামসুদ্দিন টগর ও ফিরোজ আল মামুন। বর্তমানে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালো থেকো’ চলচ্চিত্রের কাজ’সহ আরো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। পাশাপাশি টিভি নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করছেন। ১৯৫৪ সালের ৩ অক্টোবর জন্ম নেয়া জ্যাকি আমৃত্যু অভিনয় করে যেতে চান। দর্শকের মুখে হাসি ফুটিয়ে অভিনয় করতে চান।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকা।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ জন বাঙালি গায়িকা।
১২ আফজাল শরীফঃ
আফজাল শরীফ,বর্তমান এই একজন কৌতুক অভিনেতাই আছেন যিনি মাঝে মাঝে চলচ্চিত্রে নাটকে কিংবা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে মানুষকে হাসিয়ে থাকেন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "ইত্যাদিতে" কাজ করেন। আফজাল শরীফ মুলত মঞ্চ হতে পরবর্তীতে টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।আফজাল শরীফ ১৯৮৪ সালে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৮৮ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও পরিচালিত টিভি ধারাবাহিক ‘বহুব্রীহি’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ছোট পর্দায় প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। আর ১৯৯২ সালে গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার আগমন। কমেডিয়ান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সে ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
১৩ কাবিলাঃ
কাবিলার আসল নাম নজরুল ইসলাম শামীম। তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ।চলচ্চিত্রে কৌতুক এবং খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সমাদৃত।কাবিলার একটি অন্যতম পরিচয় তিনি একজন জাতীয় বক্সার, খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের হয়ে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন একটা সময়। ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও অভিনয়ে তিনি জাতীয় স্বীকৃতি লাভ করেন। কাবিলা ১৯৮৮ সালে ‘যন্ত্রনা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও পরবর্তীকালে কমেডিয়ান হিসেবে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
এক টাকার বউ, সবার উপরে তুমি, এবাদত, আমার প্রাণের প্রিয়া, জন্ম তোমার জন্য, আমাদের ছোট সাহেব, তুমি আমার প্রেম, বাবা আমার বাবা, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, তোমাকে বউ বানাবো, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, ফুল অ্যান্ড ফাইনালসহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। কাবিলা অন্ধকার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এ ছাড়া ভালোবাসা আজকাল সিনেমার জন্য ২০১৩ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার লাভ করেন।
১৪ হারুন কিচিঞ্জারঃ
হারুন কিচিঞ্জার বর্তমান সময়ের একজন কৌতুক সম্রাট। তার অভিনীত যেকোন ভূমিকায় হাসির খোরাক হয়ে দাড়ায়। তিনি বেশ কিছু সিনেমায়ও কাজ করেছেন। তবে হারুন কিচিঞ্জার টিম গঠন করে কৌতুকমূলক নাটক তৈরি করেন। তিনি বেশ কয়েকজন পরিচিত মুখ নিয়ে কাজ করেন। তার মধ্যে টাঙ্গাইলের কৌতুক কিং ভ্যাদাইমা অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে চিকন আলী ও হারুন কিচিঞ্জার একসাথে মিলে কৌতুক অভিনয় করছেন।
১৫ চিকন আলীঃ
২০০৬ সালে ‘রঙিন চশমা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় চিকন আলীর। এরপর একে একে ১৬৯টি ছবিতে অভিনয় করে নির্মাতাদের ভরসার প্রতীক তিনি। বর্তমানে চিকন আলী কাজ করছেন বেপোরোয়া, পোড়ামন ২, নুরজাহান ছবিগুলোতে। এ ছাড়া তার অভিনীত অন্তর জ্বালা, ইনোসেন্ট লাভ, পাষাণ, জান্নাত ইত্যাদি ছবিগুলো রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।
এক নজরে আরেকবার দেখুন, সেরা ১৫ জন বাঙালি কৌতুক অভিনেতাঃ
- ১। খান জয়নুল
- ২। রবিউল
- ৩। আশীষ কুমার লোহ
- ৪।দিলদার
- ৫। আনিসুর রহমান আনিস
- ৬। টেলিসামাদ
- ৭। সাইফুদ্দিন
- ৮। হাবা হাসমত
- ৯।ব্ল্যাক আনোয়ার
- ১০। ববি
- ১১।জ্যাকি আলমগীর
- ১২। আফজাল শরীফ
- ১৩।কাবিলা
- ১৪। হারুন কিচিঞ্জার
- ১৫। চিকন আলী
- সেরা ১৫ জন বাঙালি কৌতুক অভিনেতাদের দেখতে হলে নিচের ভিডিও টি দেখুন।
0 coment rios: