বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রভাবশালী বাংলাদেশীদের তালিকা। সফল মানুষেরা কখনোই তাদের কর্মের প্রতিদান খোঁজেন না। এখানেই হয়তো তাদের সাফল্যের মূলমন্ত্র গুলো নিহিত থাকে। ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশন’ মূলত যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি উদ্যোগে পরিচালিত হয়। এমনই সাফল্যমণ্ডিত মানুষদের নিয়ে ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশনের কর্মকাণ্ড সম্পাদনা করে থাকেন । সম্প্রতি তারা ১০০ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী বাংলাদেশিদের তালিকা প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রভাবশালী বাংলাদেশীদের তালিকা নিয়ে "Top Bangla Pages" ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আজকের এই বিশেষ আয়োজন।চলুন শুরু করা যাক।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রভাবশালী বাংলাদেশীদের তালিকায় রয়েছেন তারা হলেনঃ
- মুহাম্মদ ইউনূস
- জাওয়াদ করিম
- স্যার ফজলে হাসান আবেদ
- সালমান খান
- করভি রাখশান্দ
- সারা হোসেন
- সাকিব আল হাসান
- ওমর ইশরাক
- সুমাইয়া কাজী
- নিশাত মজুমদার
১ মুহাম্মদ ইউনূসঃ
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন বাংলাদেশী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক। এছাড়াও অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে সামাজিক ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে। ড. ইউনূস বিশ্ব খাদ্য পুরস্কারসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। হত দরিদ্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের সাফল্যে উন্নত বিশ্ব অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশ সেই উন্নয়নের মডেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়। ড. ইউনূস ২০১৪ সালে ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করে তুলছেন।
২ জাওয়াদ করিমঃ
ইউটিউবের নাম শোনেননি,এখন এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। দৈনন্দিন জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা ভাত-ডালের মতোই হয়ে গিয়েছে। জাওয়াদ করিম জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তার জন্ম তত্কালীন পূর্ব জার্মানিতে। পে-পালে চাকরি করার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় চ্যাড হার্লি ও স্টিভ শ্যানের নামের দুইজন বন্ধুর সাথে। এই তিনজন পরে একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট চালু করেন। গুগল যখন ওই ওয়েবসাইটটি কিনে নেয় তখন জাওয়াদ করিমকে ৬৪ মিলিয়ন ডলারের ১,৩৭,৩৩৪টি শেয়ার দেওয়া হয়েছিল। করিম পরবর্তী সময়ে এই টাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিজনেস আইডিয়া শুরু করতে ও এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছিলেন। অনেক বাঙালিই হয়তো জানেন না, একজন বাংলাদেশি ইউটিউবের জন্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
৩ স্যার ফজলে হাসান আবেদঃ
ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমজি একজন বাংলাদেশি সমাজকর্মী এবং বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংগঠন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। সামাজিক উন্নয়নে তার অসামান্য ভূমিকার জন্য তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার, জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মাহবুবুল হক পুরস্কার ও গেটস ফাউন্ডেশনের বিশ্ব স্বাস্থ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। দারিদ্র্য বিমোচন এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুডে ভূষিত করেছে। তার প্রচেষ্টায় ব্র্যাক এখন বিশ্বের ১ নম্বর বেসরকারী সংস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
৪ সালমান আমিন খানঃ
সালমান আমিন খান হলেন ‘খান একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতা। খান একাডেমি একটি উন্মুক্ত অনলাইনভিত্তিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। নিজ বাসার ছোট একটি অফিস নিয়ে প্রথমে যাত্রা শুরু করে, বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়সমূহ, বিশেষত গণিত ও বিজ্ঞানের উপর ৬,৬০০-এর অধিক ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি। ২০১২ সালে মার্কিন পত্রিকা টাইমের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির বার্ষিক তালিকায় তার নাম উঠে এসেছিল। ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত, ইউটিউবে খান একাডেমির চ্যানেলটি ২,৭৮০,৮০৮-এর অধিক গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে এবং ভিডিওগুলো সব মিলিয়ে ৭০০ মিলিয়নের অধিক বার দেখা হয়েছে।
৫ করভি রাখশান্দঃ
জনপ্রিয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘জাগো ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন করভি রাখশান্দ । মাত্র ৩০ বছর বয়সেই সাফল্যের বনে গেছেন এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে জাগো ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০০৭ সালে প্রথম ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রায়ের বাজারে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করার জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষাদান ছাড়াও আরও অনেক ধরনের সামাজিক উন্নয়ন ও জনসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন সবসময়।
৬ সারা হোসেনঃ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন দক্ষ আইনজীবী সারা হোসেন। মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে তিনি নিরলস কাজ করে চলেছেন বহু দিন ধরে। জোরপূর্বক উচ্ছেদের শিকার বস্তিবাসীদের আশ্রয় নিয়েও কাজ করছেন তিনি। এছাড়া নারী নিরাপত্তা ও আইনি ব্যবস্থার দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করার ফলে হয়রানির শিকার সাংবাদিকদের পক্ষেও তিনি সবসময় সোচ্চার রয়েছেন। বাংলাদেশের একজন আইনজীবী ও সুনাগরিক হিসেবে এই কাজগুলোকে নিজের কর্তব্য মনে করেন তিনি।
৭ সাকিব আল হাসানঃ
২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। সেই থেকে তার পথ চলা শুরু।বর্তমানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। তার খেলার মান ও ধারাবাহিকতা তাকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়, হয়েছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড় ‘দ্য ওয়ান এণ্ড অনলি’। সাকিব ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট, ওডিআই ও টি-২০ প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে এক নম্বর অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন। সাকিব প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ রান করার গৌরব অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং পৃথিবীর ২৮তম খেলোয়াড়, যিনি ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন।
৮ ওমর ইশরাকঃ
বিশ্বের চার নম্বর চিকিৎসা যন্ত্র নির্মাতা কোম্পানি মেডট্রনিকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন ড. ওমর ইশরাক। জিই হেলথ কেয়ারের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সিইও এখন আছেন মেডট্রনিকে। মেডট্রনিক সেই সময় লোকসান গুনছিল। পড়ে গিয়েছিল তাদের শেয়ার। ২০১১ সালে কোম্পানিটি নিয়ে আসে ড. ওমর ইশরাককে। ইশরাক তখন মেডট্রনিকের ধসে যাওয়ার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে সমর্থ হয়। এরমধ্যে একটি ছিল ‘ইনফুজ’নামের চিকিৎসা যন্ত্র। এই যন্ত্র সুবিধার চেয়ে অসুবিধা করছিল অনেক বেশি। এর প্রতিকার খুঁজতে থাকলেন আর ঝুঁকলেন বিশ্ববাজারের দিকেও। সবমিলিয়ে ঝড়টা ভালোভাবেই সামলে নিলেন তিনি। এ বছর লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপিরেশনের তালিকায় বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ বাংলাদেশির মধ্যে উঠে এসেছে তার নাম।
৯ সুমাইয়া কাজীঃ
সুমাইয়া কাজী জন্মসূত্রে বাংলাদেশি একজন মার্কিন নাগরিক এবং বিখ্যাত নারী উদ্যোক্তা। তার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের ফেনী শহরে। তিনি লেখাপড়া শেষ করে সান মাইক্রোসিস্টেমস নামক একটি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ওয়েবনির্ভর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। তিনি সংবাদসংস্থা রয়টার্স এবং ক্লাউট কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার তালিকায় ১৬ নম্বরে অবস্থান করছেন। সিলিকন ভ্যালি বিজনেস জার্নাল তাকে ‘ওমেন অব ইনফ্লুয়েন্স’ উপাধি দিয়েছে। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিজনেস উইক ম্যাগাজিন ও কালার লাইট ম্যাগাজিন থেকে ‘সেরা তরুণ উদ্যোক্তা’সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেছেন। পেয়েছেন সিএনএনের ‘ইয়ং পারসন হু রকস’ এবং কালার লাইট ম্যাগাজিনের সেরা তরুণ উদ্যোক্তার পুরস্কার।সব মিলিয়ে বলা যায় নারী হয়েও তিনি অত্যান্ত সফল একজন ব্যক্তিত্ব।
১০ নিশাত মজুমদারঃ
আমাদের সকলের কাছে‘হিমালয় পার হওয়া’বলতে মনে করি খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেই দুঃসাধ্য কাজটিই করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের নারী নিশাত মজুমদার। তিনি প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে শনিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা ওয়াসায় হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। পেশায় একজন অ্যাকাউনটেন্ট হলেও নিজের নেশাকে দমিয়ে রাখতে পারেননি। সারা বিশ্বের নারীদের সামনে তিনি একজন বড় মাপের আদর্শ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। হিমালয় জয় করার আগে বহুবার তিনি পর্বতারোহণ করেছেন প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে। তাই বলা যায়, এমন নারীই তো সবার জন্য আদর্শ হবেন বিশেষ করে নারী জাতির জন্য।
0 coment rios: