বাংলাদেশের দামাল সন্তানেরা নানা সংস্থার মাধ্যেমে দেশসেবায় নিয়োজিত আছে। যেমন সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ,বিজিবি, আনসার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি অনেক গোয়েন্দা সংস্থা ও বিশেষ বাহিনী বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। কাজের ধরন অনুযায়ি এসব বাহিনী পরিচিত। তবে গোয়েন্দা বাহিনীতে দেশের মেধাবীরা কাজ করছেন সবার আগোচরে। সরকারের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরাই এ বিষয়ে ভালোভাবে অবহিত। স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্স, গুপ্তচর, ইন্টেলিজেন্স, কমান্ডো- এইসব বিষয়ে সবারই একটা আগ্রহ থাকে। ওদের ট্রেনিং, কাজের ধরণ, গোপনীয়তা- সবকিছু যেন লাইভ থ্রিলার মুভি! বাংলাদেশেও তেমনই কিছু স্পেশাল অপারেশন ফোর্স রয়েছে। চলুন আজকের ভিডিও এর মাধ্যমে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ ৭টি স্পেশাল ফোর্স সম্পর্কে।
১। পিজিআরঃ
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) বঙ্গভবনে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নির্বাহী অফিসের একটি সত্তা, রাষ্ট্রপতির বিদেশ ভ্রমণ, রাষ্ট্রপতির সাধারণ যাতায়াত, চিকিৎসা সহায়তা ও জরুরি চিকিত্সা সেবা, এবং আতিথেয়তা পরিষেবা সহ সকল ধরনের নিরাপত্তা, সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করে। পিজিআর এর প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব এবং প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের কমান্ডার। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে এই বাহিনী গঠন করেন। সেই সময় এটি প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ এটি পূনর্গঠন করেন এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বাহিনী হিসাবে উন্নীতকরন করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যদের এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান এই বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব।
২। এনএসআইঃ
এন এস আই এর পূর্ণরূপ হল ন্যাশনাল সিকউরিটি ইন্টেলিজেন্স যার অর্থ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা। যুগযুগ ধরে এই বেসামরিক সংস্থাটি বাংলাদেশের প্রাইম গোয়েন্দা সংস্থা ছিল। দেশের প্রতিটা জেলায়, প্রতিটা থানায় রয়েছে এদের অফিস। সমস্ত কিছু হয় সম্পূর্ণ গোপনে। এমনকি তাদের হেডকোয়ার্টারও পুরোপুরি আন্ডারকাভার। এন এস আই এর কাজের ধরণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখন্ডতা, বাইরের দেশের হুমকির বিষয়গুলি দেশের ভিতরে ট্যাকল করা, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করে তা বিশ্লেষণ করা ও প্রয়োজন অনুসারে সরকারকে জানানো। এন এস আই এর ট্রেনিং পুরোপুরি গোপনীয়। দেশে ও দেশের বাইরে। তবে, আর্মি, নেভি, এয়ার, ডিজিএফআই’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ট্রেনিং হয়। এন এস আই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পরিচালিত হয়।
৩। সোয়াটঃ
স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স। আমেরিকার সোয়াট টিমের আদলে, তাদেরই অর্থায়নে, তাদেরই ট্রেনিংয়ে এবং তাদেরই সব ইক্যুইপমেন্টে সজ্জিত হয়ে বাংলাদেশেও যাত্রা শুরু করে তাদেরই সমান আকৃতির একটা সোয়াট টিম। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স টিম- সোয়াট। এরা হল ছোট্ট টিম, পুরোপুরি উদ্ধার অভিযান কেন্দ্রীক। যেসব সংস্থায় সশস্ত্র উদ্ধারকাজ দরকার হতে পারে, তেমন সব সংস্থার জন্য একই ধরনের একটা করে টিম গঠন করে দেওয়া হয়। এই টিমগুলির ট্রেনিং একই রকম, সামান্য এদিক সেদিক। কিন্তু তারা থাকবে লোকালাইজড সংস্থার সঙ্গে । যেমন, এফবআই’র নগরভিত্তিক প্রতিটা অফিসে, পুলিশের প্রতিটা বড় ইউনিটে ছোট একটা করে সোয়াট টিম, কোস্টগার্ড, বর্ডারগার্ড, কাস্টমস, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি। খুবই শক্তপোক্ত ভাবে নিয়োগ হয় এই ফোর্সটায়। শারীরিক হার্ডওয়ার্কের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়। সব সোয়াট টিমই পঁচিশ-পঁয়তাল্লিশজনে সীমাবদ্ধ। এরা সরাসরি ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে পরিচালিত হয়।
৪। ফরমেশন কম্যান্ডো কোম্প্যানিঃ
দুই থেকে তিনটা প্ল্যাটুন নিয়ে এক কোম্পানি। একজন ক্যাপ্টেন বা মেজরের অধীনে আর্মি ফরমেশনগুলিতে একটা করে কম্যান্ডো কোম্প্যানি থাকার কথা। প্রতি ডিভিশনেই বা ক্যান্টনমেন্টে আছে এমন কোম্পানি। এই বাহিনীর চার থেকে ছয় মাসের অকল্পনীয় ট্রেনিং করানো হয়। এই বাহিনীর বিশেষায়িত অস্ত্র হল টাইপ ফিফটি সিক্সের লাইট ফুলমেটাল ভার্শন (এখানে সবচেয়ে সাধারণ), বিশ্ব কাঁপানো উজি মেশিন পিস্তল ও সাবমেশিনগান, মার্কিন এম ফোর কারবাইন, স্পেশাল ফোর্সেস শর্ট ব্যারেল স্পেশাল এডিশন কারবাইন, কমান্ডো গ্রেনেড-নাইফ-ভেস্ট-এস্কেপ টুলস। এদের প্রধান কাজ হল সামরিক,গোপন তথ্য উদ্ধার/ গোপন স্যাবোট্যাজ, স্পেশাল অ্যাসাইন্ড কিলিং। এছাড়াও স্পর্শকাতর উদ্ধারকাজ বা শত্রুবাহিনীর মূল কোন একটা পয়েন্ট গুঁড়িয়ে দেওয়া।
৫। সিটিআইবি-
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। এদের প্রধান কাজ হল সন্ত্রাস দমন করা। এরা সরাসরি ডিজিএফআই থেকে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। ডিজিএফআই’র একটা পরিদপ্তর উপ-সংস্থা। কিন্তু এর সক্ষমতা ব্যাপক, তাই কোথাও কোথাও একে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। পৃথিবীর বড় বড় অ্যান্টি টেররিজম অর্গানাইজেশনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আদান-প্রদান হয় এদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে। মূলত এই বাহিনী বড় আয়তনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নিয়ে ডিপকাভার তদন্ত করে থাকে, এছাড়াও আরো প্রয়োজনে ডিপ আক্রমণ করে থাকে।
৬। র্যাবঃ
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এদের ভুমিকা হল কাউন্টার টেরোরিজম, অ্যান্টি ড্রাগ অ্যান্ড নারকোটিকস, স্পেশাল সেফটি অ্যান্ড সিকউরিটি, ইন্টারনাল ব্ল্যাক অপস, সন্ত্রাস দমন, গোয়েন্দা নজরদারী ইত্যাদি। এই বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয় মূলত সেনাবাহিনী থেকে ৪৪%, পুলিশ থেকে ৪৪%, বিজিবি-আনসার-নেভি-এয়ার বাকি ৬%। রেবের ফিল্ডে থাকা সবার ট্রেনিং একই মানের নয়। গোয়েন্দা শাখার ট্রেনিং বিশ্বমানের, ইন্টারোগেশনও সর্ব্বোচ্চ শ্রেণীর। ব্যাবের শুরুতে যখন গঠিত হয়, তখন পুরো ফোর্সের অর্ধেকই ছিলেন শুধু আর্মির প্যারাকমান্ডো। পরে তাদের সবাইকে মূল সার্ভিসে রিপ্লেস করা হয়।
৭। এসএসএফঃ
স্পেশাল সিকউরিটি ফোর্স হল সরকারপ্রধানের নিরাপত্তার বিশেষায়িত বাহিনী। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের অধীনে গঠিত ছিল, বর্তমানে মেজর জেনারেলের অধীনেও কাজ করে। এদের তিন বাহিনী থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অপারেটিভরা সাধারণত ক্যাপ্টেন বা সমমানের পদবী থেকে আসা। এই বাহিনীর পুরোপুরি গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। ফিল্ডের অনেক কাজ বাস্তবায়নে পুলিশ-রেব এমনকি সেনাবাহিনীও কাজে লাগানো হয়। এদের কাজের প্রধান ক্ষেত্র হল প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা, গোয়েন্দা নজরদারি, সফর সঙ্গী হওয়া।
আমি একজন অতি সামান্য মানুষ। পেশায় একজন লেখক,ব্লগার এবং ইউটিউবার। লেখালেখি করতে খুব ভালো লাগে। আমার এই সামান্য প্রয়াসের মাধ্যমে মানুষের কিছু শেখাতে পারা ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পায়।
0 coment rios: