মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পিত্তথলি, কিডনি, অগ্ন্যাশয়ে পাথর তৈরি হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কিডনিতে পাথর আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায়।
বিপাক ক্রিয়ায় যেসব বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়, তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সেই উপাদানগুলো দ্রবীভূত অবস্থা থেকে ঘনীভূত ও কঠিন হয়ে ক্ষুদ্র কণায় বা পাথরে পরিণত হয়। এ স্ফটিকের চারপাশে আরও ছোট ছোট কণা জমে ধীরে ধীরে বড় হয়ে পাথরে পরিণত হয়। ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
বিপাক ক্রিয়ায় যেসব বর্জ্য পদার্থ সৃষ্টি হয়, তা প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সেই উপাদানগুলো দ্রবীভূত অবস্থা থেকে ঘনীভূত ও কঠিন হয়ে ক্ষুদ্র কণায় বা পাথরে পরিণত হয়। এ স্ফটিকের চারপাশে আরও ছোট ছোট কণা জমে ধীরে ধীরে বড় হয়ে পাথরে পরিণত হয়। ক্যালসিয়াম বা ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর সৃষ্টি হতে পারে।
কিডনিতে পাথর এখন খুবই সাধারণ সমস্যা। এই রোগ নারী বা পুরুষ সবাই উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন। এই পাথর ধীরে ধীরে শরীরের কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আর দেরিতে এই রোগ ধরা পড়ায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।
কিডনিতে পাথর কেন হয়?
যাঁরা গরম আবহাওয়ায় কাজ করেন এবং পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। প্রস্রাবে বারবার সংক্রমণ, মূত্রপ্রবাহে বাধ, অতিরিক্ত লাল গোশত খাওয়া, হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম, বেশি বেশি ফাস্ট ফুড খাওয়া, ভাঁজাপোড়া খাওয়া, রেনাল টিউবুলার অ্যাসিডোসিস ও নেফ্রোক্যালসিনোসিসের মতো রোগ এবং কিছু জন্মগত ত্রুটিতেও পাথর হয়। প্রয়োজন ছাড়া অযথা অতিরিক্ত ভিটামিন সেবন, বিশেষ করে ভিটামিন সি ও ডি অক্সালেট ও ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।তবে আপনি চাইলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই দূর করতে পারেন কিডনির পাথর।
মূলত কিডনি পাথর কী?
কিডনির ভেতরে মিনারেল জমে স্ফটিকের মতো দানা পদার্থ তৈরি করে। এটাকেই কিডনি পাথর বলা হয়। অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের ডিপোজিশন হলে এই রোগের সৃষ্টি হয়।কিডনি রোগের লক্ষণ
- অনেক সময় কোনো লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। মেরুদণ্ড বা অন্য কারণে চেকআপের সময় পাথর থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।
- পেটের ওপরের দিক অথবা পিঠের দুপাশে ডানে বা বাঁয়ে মৃদু বা তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু প্রস্রাব হয়েই আর না হওয়া, মাঝে মাঝে প্রস্রাবের সঙ্গে ছোট পাথর যেতে পারে।
- কখনো কখনো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর উঠে, বমিবমি ভাব বা বমি।
- ওপরের পেট বা পিঠের পাশ থেকে কুঁচকির দিকে বা পেটের নিচের দিকে দুপাশে বা কিংবা কোমরে তীব্র ব্যথা এবং সঙ্গে বমিবমি ভাব।
- বমি বমি ভাব হওয়া বা কখনও কখনও বমি হয়।
- তলপেটের নিচে এবং কুঁচকিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
- পাঁজরের নিচে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া এবং এই ব্যথার তীব্রতা ২ ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।
- প্রস্রাব করতে গেলে ব্যথা হয় বা জ্বালা পোড়া করে এবং কালচে লাল, লাল কিংবা বিভিন্ন রঙের প্রস্রাব হওয়া।
- বারবার প্রসাবের বেগ আসে এবং স্বাভাবিকের তুলনায় প্রস্রাব বেশি পরিমাণে হওয়া।
- দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হয়। কিডনিতে পাথর বিকাশের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের অবদান অনেক।
কিডনিতে পাথর নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা–নিরীক্ষা
প্রস্রাব, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে করে পাথরের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য আইভিইউ অথবা সিটি স্ক্যান করতে হয়।কিডনি রোগের চিকিৎসা
যথাযথ চিকিৎসার আগপর্যন্ত সাধারণ ব্যথানাশক ও অ্যান্টিস্পাজমোডিক ওষুধ প্রয়োজন হয়। অনেক রোগীই এমন ওষুধ চান, যা খেলে পাথর গলে বের হয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এমন কোনো কার্যকর ওষুধ নেই। পাথর ক্ষুদ্র হলে নিজেই বের হয়ে যেতে পারে, তবে পাথর বড় হলে অস্ত্রোপচার করে বের করতে হয়। পেট না কেটে নানাভাবে চিকিৎসা করে পাথর নিরাময় করা যায়।তবে কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারেরও চেষ্টা করতে পারেন। আসুন জেনে নিই ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে কিডনি পাথর দূর করবেনঃ
- প্রচুর পানি পান করতে হবে। দৈনিক আড়াই-তিন লিটার পানি পান করতে হবে ও সুষম খাদ্য খেতে হবে। খুব ছোট আকারের পাথর দেখা দিলে পরিমাণমতো পানি পানের মাধ্যমে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
- রেডমিট কম খেতে হবে। যেসব খাদ্যে অক্সালেট বেশি থাকে তা–ও কম খেতে হবে যেমন, পালংশাক, স্ট্রবেরি, মাখন, চকলেট, দুগ্ধজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- তুলসী পাতায় থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনির পাথরকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত দুবার করে তুলসী পাতার রস খান। আর তুলসীর পাতা দিয়ে চা করেও পান করতে পারেন।
- পাতিলেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামজাত পাথর তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ছোট পাথরগুলোকে ভেঙে বের করে। রোজ সকালে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশ্রিত করে পান করুন অথবা দিনের যেকোনো সময়ে লেবুর রস পান করুন।
- প্রয়োজন ছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম জরুরি।
- ডালিম রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর ও অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সারাদিনে কতবার এটি পান করবেন তা ঠিক করুন।
- আপেল সিডার ভিনিগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর দূর করে এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। আপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে পান করুন। তবে একদিনে ১৫ চামচের বেশি খাবেন না।
- কালিজিরা বীজ একটি গবেষণা অনুযায়ী, কালিজিরার বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন গঠনে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়। ২৫০ এমএল গরম জলে হাফ চা চামচ শুকনো কালিজিরা বীজ দিন। এটি দিনে দু'বার পান করুন।
তবে এগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
0 coment rios: