চুল পাকার কারনঃ
- চুল পাকার সঙ্গে বংশগত সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য বংশগত কারণে কারো কারো ক্ষেত্রে চুলো অন্যদের তুলনায় আগে পাকা শুরু করে।
- থাইরয়েডের সমস্যা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাজনিত রোগ, শ্বেতি, আ্যলার্জি, পরিপাকতন্ত্রের রোগ, রক্ত শূন্যতা, প্রোজেরিয়া ও প্যানজেরিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে কম বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।
- কিছু ওষুধ যেমন: ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ইত্যাদির কারণে সাময়িকভাবে চুল পেকে যায়।
- অতিরিক্ত চিন্তা চুলের বৃদ্ধি ও গঠন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপানও অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে।
- মানসিক অশান্তি, মানসিক চাপ, মনে কষ্ট, দুশ্চিন্তা, খারাপ চিন্তা ইত্যাদি থেকে অকালে চুল পাকতে পারে। তারুণ্য ধরে রাখার জন্য সেরেটনিন হরমোন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। মানসিক অবসাদ রক্তে সেরটনিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেই। যার ফলে চুল অকালে পেকে যায়।
- ভিটামিনের অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফোলেট, ভিটামিন বি–১২, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডির অভাবে অকালে চুল পেকে যায়। ভিটামিন সি–জাতীয় খাবারের মধ্যে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বক, চুলের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। অপুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেলের অভাবে অনেকের চুল অকালে পেকে যায়।
- অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করলে, চুল অতিমাত্রায় ডাই ও রং ব্যবহার করলেও চুল অকালে পাকতে পারে। সব প্রসাধনী সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী নয়।
- ভেজাল খাবার, পরিবেশদূষণের জন্যও চুল পাকতে পারে।
- অতিরিক্ত ফাস্ট-ফুড খাওয়া, উচ্চমাত্রার প্রোটিন গ্রহণ, অতিমাত্রায় কোমল পানীয় ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং বয়স অনুযায়ী অতিরিক্ত ওজন বেশি থাকলেও চুল অকালে পাকতে পারে।
- কিছু অটোইমিউন ডিজিজে চুল সাদা হয়ে যায়। এ ধরনের রোগের মধ্যে ভিটিলিগো অন্যতম।
- কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপিসহ কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় চুল পেকে যায়।ফ্রি রেডিকেল’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্যহীনতার কারণে অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ে। বাহ্যিক বিষয় যেমন- দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ায়।
- কৈশোর অবস্থায়, গর্ভাবস্থা ও মেনো-পোজের সময় হরমোনের পরিবর্তন ফলে চুলের রংয়ের ওপর প্রভাব রাখে। হরমোণের ওঠানামা যেমন- ‘মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন’ ও কর্টিসোল চুল সাদা করার জন্য দায়ী।
- দীর্ঘদিন মানসিক চাপ দেহের নানান কার্যক্রিয়া এমনকি চুলের রংয়েও পরিবর্তন আনে। দীর্ঘমেয়াদী বা উচ্চমাত্রার মানসিক চাপ ‘মেলানোসাইটিস’ বা মেলানিন উৎপাদনে ক্ষয় বৃদ্ধি করে যা চুল সাদা করার জন্য দায়ী।
- নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে জড়িত ধূমপান। আর এটা অকালে চুল পাকার জন্যও দায়ী। এতে থাকা ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করে, মেলানিন উৎপাদনের ওপরে প্রভাব রাখে।এটা এক ধরনের ত্বকের জটিলতা যা রঞ্জক কোষকে আক্রান্ত করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এটা চুলের রংয়ের ওপরেও প্রভাব রাখে। কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে অনেক সময় চুল সাদা হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ব্লিচ বা রঙিন উপাদান চুলের ক্ষতিসাধন করে আর মেলানোসাইটিসের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার চুল সাদা করে ফেলে ও প্রাকৃতিক ‘পিগমেন্টেইশন’ বা রং নষ্ট করে দেয়।
- বায়ু দূষণের মতো প্রাকৃতিক দূষণ চুলের স্বাস্থ্য খারাপ করে।
চুল পাকা প্রতিকারের উপায়ঃ
- মৌসুমি ফল, শাকসবজি প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সবুজ–হলুদ ফলের মধ্যে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে অতি উচ্চ-মাত্রায়, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ইতিবাচক চিন্তা, সৃজনশীল কাজ, ভালো বন্ধুত্ব, শখের কাজ মানসিক প্রশান্তি জোগায়, মন ভালো রাখে ও চাপ কমায়।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সঠিক ওজন বজায় রাখুন।
- নিয়মিত ভালোভাবে চুল আঁচড়াতে হবে। তাহলে চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ হবে।
- সময় পেলেই হাঁটতে হবে। এতে শরীরের সব অঙ্গে রক্ত সরবরাহ হয়।
- স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে গোসল করার অভ্যাস গড়ুন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চুলে কলপ, রাসায়নিক ব্যবহার করা অনুচিত। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী, মানহীন বিউটি পারলার থেকে সেবা গ্রহণ না করাই ভালো।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রূপচর্চার জন্য কোনো ওষুধ সেবন করবেন না।
- ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়তে হবে। যা দেহের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে টাটকা ফল, সবজি, চর্বিহীন মাংস ও পূর্ণ শষ্য।
- মানসিক চাপ কমাতে নানান কিছু চর্চা করা যেতে পারে। যেমন- ধ্যান, ইয়োগা বা গভীর নিঃশ্বাসের ব্যায়াম।
- চুলে কড়া রাসায়নিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে। যেমন- ব্লিচিং এবং অতিরিক্ত রং করা।
- মাথার ত্বক নিয়মিত মালিশ করতে হবে। এতে মাথায় রক্ত চলাচল বাড়বে, চুলের গোড়া সুস্থ থাকবে। ফলে বজায় থাকবে প্রাকৃতিক রং।
- সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে মাথায় টুপি বা স্কার্ফ পরা উচিত।
- শুষ্কতা এড়াতে ও চুল আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
- যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- আমলকীতে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। নিয়মিত আমলকী খেলে চুল পাকা বন্ধ হতে পারে। এ ছাড়া মাথায় আমলকীর পেস্ট ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে উপকার মেলে।
- চুল পাকলে মেহেদির ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলের প্রাকৃতিক রং এনে দিতে পারে। মেহেদির সঙ্গে কফি পাউডার, একটু দই অথবা লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে দুই-দিন ঘণ্টা রাখলে উপকার পাবেন। পরে পানি ও শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হয়।
- বাদামের তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। এতে চুল পাকার হার কমবে।
- কম বয়সে চুল পাকা ঠেকাতে ব্ল্যাক টি দারুণ কার্যকর। চায়ের পাতা সেদ্ধ করে তা ঠান্ডা করুন। তারপর তা মাথায় রাখুন ঘণ্টাখানেক। পরে শ্যাম্পু ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- ঈষৎ উষ্ণ সরিষা বা নারকেল তেল নিয়মিত মাথায় ম্যাসাজ করলে চুল পাকা কমতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি চুল পাকার কারণ হতে পারে।
- ফাস্ট ফুড খেলে চুল পরতে পারে ও চুল সাদা হয়ে যেতে পারে। যতটা সম্ভব এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন।
ট্যাগঃ কি ব্যবহার করলে চুল পাকা বন্ধ হয়?
কম বয়সে মাথার চুল পাকার কারণ কী?
কোন ভিটামিন খেলে চুল পাকা বন্ধ হবে?
চুল পাকার জন্য কোন হরমোন দায়ী?
অকালে চুল পাকার কারণ,
অকালে চুল পাকা রোধে করণীয়,
অল্প বয়সে চুল পাকে কেন? সমাধান কী?,
অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান,
চুল পাকা বন্ধ করার তেল,
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও প্রতিকার,
অল্প বয়সে চুল পাকার হাদিস,
ছেলেদের অল্প বয়সে চুল পাকার সমাধান,
অল্প বয়সে চুল পাকার ঔষধ,
চুল পাকা বন্ধ করার খাবার,
অল্প বয়সে চুল দাড়ি পাকার কারণ এবং চুল সাদা করে ফেলে,
অল্প বয়সে চুল দাড়ি পাকার কারণ কি,
olpo boyose chul pakar karon
0 coment rios: